Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
yamean-boat
ফাইল ছবি

সরকারের নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও বাংলাদেশিদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়া বন্ধ হচ্ছে না। মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপে প্রবেশ করেছে ১৯০ জন বাংলাদেশি। যা বিভিন্ন দেশের মোট নাগরিকদের মধ্যে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

এসব তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন তিন হাজার ১৮৬ জন অভিবাসন প্রত্যাশী। এই সময়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে নিহত এবং নিখোঁজ হয়েছেন ৬৬৭ জন।

chardike-ad

২০১৮ সালে ২৩ হাজার ৩৭০ জন অভিবাসন প্রত্যাশী সাগরপথে ইতালি পৌঁছায়। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৯ হাজার ৩৬৯ এবং ২০১৬ সালে ইতালি যায় ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৬ জন।

ইউএনএইচসিআরের মতে, গত ২০ ও ১৮ জুন প্রকাশিত দুটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরে ইতালিতে ৪৯৪ জন বাংলাদেশি প্রবেশ করেছে। এ বছরের ৩১ মে পর্যন্ত সমুদ্রপথে ইতালিতে প্রবেশ করেছে ১ হাজার ৫৬১ জন অভিবাসী। এর মধ্যে ১৪৫ জন বাংলাদেশি। এর আগের বছরেও একইভাবে প্রবেশ করে ৩৪৯ জন বাংলাদেশি।

তবে এই সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের রোম দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের পরামর্শক (স্থানীয়) পদে দায়িত্বরত মো. আরফানুল হক বলেন, ‘সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছানো মানুষের সংখ্যা এখন একেবারেই কমে এসেছে। তাই ইউএনএইচসিআর-এর এই হিসাব নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ইতালির বর্তমান সরকার অবৈধপথে আসা অভিবাসীদের ব্যাপারে এখন খুবই কঠোর। এজন্য অভিবাসন প্রত্যাশীরা নৌকায় ওঠার পর বা নৌকা থেকে তীরে নামার আগেই পরিচয় সংক্রান্ত সব নথি ফেলে দেয়। ফলে তাদের কাছে জাতীয়তা চিহ্নিত করার মতো কিছুই থাকে না।’

ইউএনএইচসিআর-এর ওয়েবসাইট বলছে, সাগরপথে ইতালিতে প্রবেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক রয়েছে। এ বছর অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা চারটি দেশ হচ্ছে তিউনিসিয়া, পাকিস্তান, আলজেরিয়া ও ইরাক।

এ বছর পাকিস্তানের ৪২৬ জন নাগরিক ইতালি প্রবেশ করেছে যা মোট প্রবেশ করা অভিবাসন প্রত্যাশীর ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে তিউনিসিয়ার নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেছে। পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মোট প্রবেশের ২১ দশমকি ৪ শতাংশ, ৫৯৪ জন তিউনিসিয়ার নাগরিক ইতালিতে প্রবেশ করেছে।

একইভাবে আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা ইতালি পৌঁছেছে। এগুলোর মধ্যে আছে আইভরিকোস্ট, কোরিয়া, মিসর, সুদান, গিনি, মরক্কো, সেনেগাল, ঘানা, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ক্যামেরুন, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, মালি, লিবিয়া ও সিরিয়া।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষক ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘খেয়াল করলে দেখা যায়, দেশগুলোর প্রত্যেকটিতে গণতন্ত্র বা শাসন-ব্যবস্থা হুমকির মুখে আছে। তাদের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।’

উন্নত দেশগুলোও শ্রমের চাহিদা থাকার কারণেই অবৈধপথে জনশক্তি প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে উল্লেখ করে এই অভিবাসন গবেষক বলেন, ‘একজন বৈধ শ্রমিকের খরচ দিয়ে তারা একশ শরণার্থীকে কাজ করাতে পারছে, তাদের লভ্যাংশ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ভাতা বা পারিতোষিক দিতে হচ্ছে না।’

‘অভিবাসন প্রত্যাশীদের তারা এভাবে রিফিউজি কার্ড দিয়েই কাজ করাবে। আর কাজ করানো শেষ হলে বের করে দেবে’ বলেন তিনি। তবে ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাগরপথে ইতালি যাওয়া বন্ধ না হলেও সংখ্যার হিসেবে তা কমে এসেছে।

সাগরপথে মানুষ যাওয়া কমে আসায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভূমধ্যসাগরে নিহত মানুষের সংখ্যাও কমেছে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ইতালি যাওয়ার পথে নিহত এবং নিখোঁজ হন চার হাজার ৫৭৮ জন, ২০১৭ সালে তা কমে দুই হাজার ৮৭৩ জনে নামে। আর গত বছরে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু এবং নিখোঁজ হয়েছেন এক হাজার ৩১১ জন অভিবাসন প্রত্যাশী।

উল্লেখ্য, এ বছরের মে মাসে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ৩৯ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ সবাই প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ ছাড়া এ সময়ে ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গত মে মাসে অভিবাসী বোঝাই নৌকা উপকূলে ডুবে যায়। নৌকাটিতে প্রায় ৭৫ জন যাত্রী ছিলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যানভিত্তিক অধিদফতর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশের মধ্যে ইতালিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশিদের আবেদনের হার সবচেয়ে বেশি।

শুধু ২০১৭ সালে ইতালিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বাংলাদেশিদের আবেদন জমা পড়েছে ১২ হাজার ১২৫টি। আর পুরো ইইউতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বাংলাদেশিদের আবেদন জমা পড়েছে ১৯ হাজার ২৮০টি।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ