আগামী বছর বৈশ্বিক ই-কমার্স খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হবে এশিয়া। এ সময়ে বর্তমান ই-কমার্স খাতের সবচেয়ে বড় বাজার উত্তর আমেরিকাকে অতিক্রম করবে এশিয়া। ব্যবসা-সংক্রান্ত বিভিন্ন পূর্বাভাস ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করে। খবর টেকটু।
২০১৫ সালে এশিয়ার ই-কমার্স বাজারের মোট মূল্য দাঁড়াবে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে (৭ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন)। এছাড়া এ সময় এশিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতটির প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, যেখানে উত্তর আমেরিকার প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৫ এবং ইউরোপে সংশ্লিষ্ট খাতটির প্রবৃদ্ধি হবে দশমিক ৮ শতাংশ। ইআইইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোনের বাজার এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ই-কমার্স খাতের প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বলে জানানো হয়।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম সিনহুয়াও সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এশিয়ায় নারীদের স্বাধীনতা দিন দিন বাড়ছে। দেখা যায়, অনলাইনে নারীরাই কেনাকাটা করেন বেশি। নারীদের স্বাধীন পদচারণা খাতটির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইআইইউ চীনের মূল ভূখণ্ড, হংকং, তাইওয়ান, ম্যাকাওসহ ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর ও রিপাবলিক অব কোরিয়ার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নারীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৪৩ শতাংশই কর্মজীবী। তাদের প্রায় অর্ধেকই জানান, তারা বাজারে গিয়ে কেনাকাটার চেয়ে অনলাইনেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর নারীদের মধ্যে কর্মজীবীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে তারা নিজেরাই কেনাকাটা করতে পারছেন, যা সংশ্লিষ্ট খাতটির উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৯ শতাংশই চীনের মূল ভূখণ্ডের নাগরিক। তাদের ৬৩ শতাংশ জানান, প্রতিদিন অন্তত একবার তারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৩০ শতাংশ জানান, তারা দিনে একাধিকবার অনলাইন কেনাকাটার লক্ষ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
তারা আরো জানান, অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে তারা পণ্যের গুণগত মান ও সরবরাহের ধরনকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের সঙ্গে বেশকিছু বাড়তি সেবা দিচ্ছে। এগুলোও তাদের অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী করে তুলছে।
এশিয়ার রয়েছে বিপুল জনসংখ্যার দুটি দেশ। শুধু ভারত ও চীনেই রয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ। আর এ দেশ দুটিতে ই-কমার্স খাত ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চীনে আলিবাবা ও ভারতে ফ্লিপকার্টের মতো বেশকিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দিন দিন। এদিকে সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, জাপানেও খাতটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
এছাড়া ই-কমার্স খাতের প্রসারে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোনের বাজার এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে দিন দিন অনলাইন কেনাকাটার পরিমাণ বাড়ছে। এমনকি তা ডেস্কটপ ব্যবহার করে অনলাইন কেনাকাটার পরিমাণকেও ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে অনলাইন কেনাকাটার অর্ধেকেরও বেশি হয় স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের মতো মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে। দ্রুত ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে পণ্য সরবরাহ, তুলনামূলক ভালো মানের পণ্য সরবরাহ এবং গতানুগতিক বাজারের সঙ্গে পণ্যের দামের খুব বেশি তারতম্য না হওয়ায় খাতটিতে গ্রাহকদের পদচারণা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ডিভাইস নির্মাতারাও ই-কমার্স সেবার কথা মাথায় রেখে তাদের ডিভাইসগুলোয় সংশ্লিষ্ট অনেক সেবা যুক্ত করছেন। ফলে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে কেনাকাটা গ্রাহকদের জন্য আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গেছে। আর পার্সোনাল কম্পিউটারের বাজার নিম্নমুখী হওয়ায় অনলাইন কেনাকাটায়ও এর প্রভাব পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরে এশিয়া অঞ্চলে অনলাইন কেনাকাটায় মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার আরো অনেক বাড়বে। বণিকবার্তা।