Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৪৩ বছরে সনদ বাতিল হয়েছে একজনের

base_1475869038-xcft

চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে ৩ অক্টোবর এক নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে স্বজনদের হাতে তার মৃত্যুসনদ ধরিয়ে দেন চিকিৎসক। পরে নবজাতকটির মা দেখেন, তার সন্তান নড়াচড়া করছে। এ অবস্থায় শিশুটিকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি শুরুতেই অপচিকিৎসার শিকার এ নবজাতককে।

chardike-ad

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জাহিদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে জন্মের পর এক নবজাতককেও মৃত ঘোষণা করা হয়। কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার পর কেঁদে ওঠে ওই শিশু। এর পর চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনা হলেও বাঁচানো যায়নি তাকেও।

প্রতিনিয়তই এমন ভুল ও অপচিকিৎসার ঘটনা ঘটছে দেশের হাসপাতালগুলোয়। এতে চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যুবরণ করছে রোগী। অথচ শাস্তি হচ্ছে না অভিযুক্ত চিকিৎসকের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেশাগত দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরের মধ্যে মাত্র একজন চিকিৎসকের সনদ বাতিল করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। বাকিরা কোনো না কোনোভাবে পার পেয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএমডিসির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তদন্তে আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটিকে আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেননা অভিযুক্তদের শাস্তির বিষয়ে আগের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বিএমডিসি।

সম্প্রতি দুই জীবিত শিশুকে চিকিৎসক কর্তৃক মৃত্যুসনদ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দুই ক্ষেত্রে গুরুতর অবহেলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শিশু দুটিকে আরো পর্যবেক্ষণে রাখতে পারতেন।

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় আল-বারাকা হাসপাতালে মমতাজ বেগম নামে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের মালিক ডা. ফারুকুজ্জামান নিজেই। কিন্তু অস্ত্রোপচার শেষ না হতেই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ওই চিকিৎসক ক্লিনিকের সহকারী ব্যবস্থাপক সজীবকে বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। পরে রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে হামলা চালান।

২০১৪ সালের ১৭ জুলাই রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকায় চোখের ছানি অপারেশন করতে গিয়ে কাশেম খাঁ নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় উত্তেজিত লোকজন লায়ন বাঁধন চক্ষু হাসপাতালে ভাংচুর চালায়। স্বজনদের অভিযোগ ছিল, সুস্থ দেহে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে শেষ পর্যন্ত মৃত হয়ে বের হয়েছেন রোগী। চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় এমনটি হয়েছে।

ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ১৯৯৩ সালে কুমিল্লা জেলায় কর্মরত চিকিৎসক অরুণ জ্যোতি চাকমার চিকিৎসা সনদ সাময়িক বাতিল করে বিএমডিসি। ওই চিকিৎসক শ্রী ভদ্র ভিক্ষু নামে এক ব্যক্তির অপারেশন করেন। এতে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। ঘটনাটির লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে ওই চিকিৎসকের সনদ বাতিল করে বিএমডিসি। পরবর্তীতে এ ধরনের অপরাধ আর কখনো করবেন না, এমন লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়ায় দুই বছর পর অরুণ জ্যোতি চাকমার সনদ ফিরিয়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) বাসুদেব গাঙ্গুলী বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোয়ই ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটে। এসব হাসপাতাল অনুমোদন দেয়ার আগে সেখানকার চিকিৎসক, লোকবল, যন্ত্রপাতি সব ঠিকমতো আছে কিনা, তা নিশ্চিত করার নিয়ম থাকলেও অনেক সময় সেটি করা হয় না। ভুল চিকিৎসা রোধে এটি করা জরুরি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসক রয়েছেন ৮৫ হাজার ৫৮৭ জন। এছাড়া প্রতি বছর সরকারি মেডিকেল কলেজে ৩ হাজার ২১২ ও বেসরকারিতে ৬ হাজার ১৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নেয়ার পর বিএমডিসির কাছ থেকে চিকিৎসক সনদ নিয়ে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন তারা।

চিকিৎসকদের পাঠ্যপুস্তক, পেশাগত সনদ থেকে শুরু করে সবই নিয়ন্ত্রণ করছে বিএমডিসি। ২০১০ সালের বিএমডিসি আইনের ২৩-এর (১) ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো পেশাদার মেডিকেল চিকিৎসক, ডেন্টাল চিকিৎসক বা মেডিকেল সহকারী আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে বা নির্ধারিত পেশাগত আচরণ কিংবা নীতিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘনের কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে, কাউন্সিল ওই ব্যক্তির নিবন্ধন বাতিলক্রমে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার থেকে তার নাম প্রত্যাহার করতে পারবে।

আইনের ৩০ ধারা (১) উপধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত কোনো চিকিৎসক রোগীর জন্য সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি তিন বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথচ চিকিৎসকরা প্রায়ই নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন। আর ভুল চিকিৎসা তো আছেই।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, বিএমডিসি যখন গঠন হয়, তখন দেশে চিকিৎসক ছিলেন মাত্র পাঁচ হাজার। এখন চিকিৎসক অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি বিএমডিসির সক্ষমতা। এ অবস্থায় রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বণিকবার্তা।