Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই তবু বিদ্যুতের মামলায় জেল

একেই বলে ‘নামে নামে যমে টানা’। নাম মিলে যাওয়ায় যার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, তিনিই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার মামলায় জেল খেটে ফিরলেন। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর আওতাধীন ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিস। পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় কার্যালয় থেকে আবাসিক সংযোগের চার মাসের বিল বকেয়া থাকায় নূরুল আমীনের নামে মামলা করা হয়। নূরুল আমীনের বাবা মৃত ছফির উদ্দিন। পল্লী বিদ্যুতের ভুলে নূরুল আমীনের পরিবর্তে মামলায় আসামি হয়ে যান নুরুল ইসলাম। ঘটনাচক্রে নুরুল ইসলামেরও বাবার নাম ছফির উদ্দিন। নূরুল আমীনের বাড়ি মগটুলা ইউনিয়নের ইকুরিয়াকান্দায় হলেও পল্লী বিদ্যুতের ভুলে ইকুরিয়া হয়ে যায় নাউড়ি। নাউড়ির নুরুল ইসলামের বয়স ৩০ বছর। নুরুল ও তার বাবা ছফির দু’জনই দিনমজুর। এলাকায় যখন কাজ কম

 electricity

থাকে, তখন নুরুল ঢাকার জুরাইন এলাকায় রিকশা চালাতে যান। গত ৯ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরার দিন রাতেই পুলিশ এসে গ্রেফতার করে নুরুলকে। এরপর কারাগারে দুর্বিষহ ১২টি দিন কাটিয়ে ছাড়া পান নুরুল। অবশ্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারণে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

chardike-ad

৯ মার্চ গ্রেফতারের পরদিন শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় নুরুল ইসলামকে। ঈশ্বরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানায় নুরুল ইসলাম ও বাবার নাম ছফির উদ্দিন থাকায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল।’

স্পর্শকাতর ঘটনাটির খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার মগটুলার নাউড়ি গ্রামে নুরুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়িতে নেই। বৃষ্টির মধ্যেও পেটের দায়ে কামলা দিতে (দিনমজুরি) গেছেন নুরুল। নাউড়ি গ্রামের ছফির উদ্দিনের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নুরুল বড়। খবর দিয়ে বাড়ির অদূর থেকে আনা হয় নুরুলকে। নুরুল জানান, অন্যের বাড়িতে কামলা দিয়ে বড় হয়েছেন। মা-বাবাকে নিয়ে তার সংসার। এলাকায় যখন কাজ থাকে না, তখন ঢাকার জুরাইন এলাকায় রিকশা চালান তিনি। গত ৯ মার্চ দুপুরে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। ওই রাতেই পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তাকে। নুরুল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে_ জানতে চাইলে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের মামলায় আদালতের পরোয়ানাভুক্ত আসামি তিনি। ঘরে বিদ্যুৎ না থাকলেও বিদ্যুতের মামলায় আসামি হয়েছেন শুনে তার মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

নুরুল ১০ থেকে ২১ মার্চ দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দিজীবন কাটানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নুরুল জানান, পরে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনা হয়। জেল থেকে বের করে তাকে ময়মনসিংহের একটি হোটেলে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়। পরে সেখান থেকে গাড়িতে করে বাড়িতে আনার পথে কর্মকর্তারা অনেক বোঝান বিষয়টি নিয়ে আর কিছু না করতে। পরে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দেন কর্মকর্তারা।

নুরুল ইসলামের চাচা নাজিম উদ্দিন বলেন, তার ঘর থেকে একটি বাতি নিয়ে ঘরে জ্বালানোর জন্য ভাতিজাকে অনেকবার বললেও তারা নিতে রাজি হয়নি। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের মামলায় জেলে যেতে হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নূরুল আমীনের নামে করা মামলায় তার ভাজিতা জেলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার মুক্তির ব্যবস্থা করে।

মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মামুন বলেন, নুরুল ইসলামের সঙ্গে একটি অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-৩ ঈশ্বরগঞ্জ সাব-জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক গোলজার হোসেন জানান, নূরুল আমীনের নামে মামলা করার জন্য তারা প্রস্তাব করেছিলেন। মামলার বিষয়টি হেড অফিস দেখে। এ ঘটনায় তার কোনো গাফিলতি ছিল না। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক যুবরাজ চন্দ্র পাল বলেন, ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত শেষে ভুল করার কারণে ইদ্রিস আলী নামের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার দাবি, নুরুল ইসলামকে মামলা থেকে মুক্তি দিয়ে কারামুক্ত করে বাড়িতে দিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, আমরাও চাই না এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। নুরুল ইসলাম ও তার পরিবার তাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিয়েছেন এবং তারাও নুরুলের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। নুরুল যত দিন জেলে ছিলেন, তত দিন পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সমকাল।