
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের
মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কাজে চুক্তিগত অনিয়ম, দরপত্রে কারসাজি এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের ও আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিল, উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল ও ইবনে আলম হাসান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান ও আবদুস সালাম।
এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী এবং ইকরাম ইকবালও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান এদিন আদালতে আবেদনটি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১২ অক্টোবর দুদক মামলাটি দায়ের করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালে মেঘনা–গোমতী সেতুর টোল আদায়ের জন্য আগের দরপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করা হয়। পরে একক উৎসের ভিত্তিতে নতুন দরপত্র ডেকে শুধুমাত্র সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হয়। এ চুক্তিতে নির্দিষ্ট অর্থের পরিবর্তে মোট টোল আদায়ের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ (ভ্যাট ও আয়কর বাদে) সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ মেয়াদে একই সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা এমবিইএল-এটিটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় কাজটি সম্পন্ন করেছিল। পরবর্তীতে ২০২২-২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা পাঁচ বছরে হিসাব করলে প্রায় ১১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
এর বিপরীতে সিএনএস একই সময়ের জন্য প্রায় পাঁচগুণ বেশি অর্থ বিল তোলে এবং ‘নতুন প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ দেখিয়ে অতিরিক্ত ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি করে। এসব অনিয়মের ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যা দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। একইভাবে ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান কামালসহ আরও কয়েকজন সাবেক শীর্ষ নেতা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।







































