Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মূল আসামি কাতারে, নিরপরাধ আজিজ কারাগারে

ajijমূল আসামি আব্দুল আজিজ চলে গেছেন কাতারে। তার জায়গায় নিরপরাধ আব্দুল আজিজকে ধরে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে যশোরের পুলিশ। যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের ঘটনা এটি।

আসামির নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নামে মিল থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজের বর্তমান বয়স ৪০ বছর। আর গ্রেফতার হওয়া আব্দুল আজিজের বয়স ৬১ বছর। আসামি আব্দুল আজিজের বাবা আহাদ আলী কারিগর জীবিত থাকলেও গ্রেফতার আব্দুল আজিজের বাবা মৃত। আসামি আজিজের মায়ের নাম মর্জিনা বেগম হলেও গ্রেফতার আজিজের মায়ের নাম মৃত খাদিজা।

chardike-ad

চৌগাছা থানা পুলিশের ওসি রিফাত খান রাজীব জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের মামলার ওয়ারেন্ট কার্যকর করতে গিয়ে নাম, বাবার নাম, গ্রাম একই হওয়ায় আবদুল আজিজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় তারা কিন্তু বলেনি, এ মামলার আসামি নয়। তার নামে অন্য মামলা আছে। সেজন্য তারাও মনে করেছে ওয়ারেন্ট হতে পারে। আদালতে হাজির করলেও বলেনি। পরবর্তীতে আদালতের নথিতে জানা যায় এ আবদুল আজিজ সেই আসামি নয়। আমরা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেবো ‘ভুল হয়েছে’। তিনি আরও বলেন, ওয়ারেন্টে নাম ঠিকানা দেখেই আসামি গ্রেফতার করা হয়। যাচাই করার সুযোগ থাকে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে লোহিত মোহন সাহার ছেলে নবকুমার সাহার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ অক্টোবর নবকুমার সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন। বাঘারপাড়া থানায় যার নম্বর ছিল ১২। তারিখ ২৩/১০/০৯ ইং। মামলাটি আদালতে গেলে নম্বর হয় জিআর-১২৭/০৯। মামলা দায়েরের পর ২০১১ সালে ৩০ মার্চ তৎকালীন বাঘারপাড়া থানায় কর্মরত এসআই গাজী আব্দুল কাইয়ুম লুটতরাজ ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩(ক) ধারায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে ৯ আসামির মধ্যে ৭ নম্বর আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি (মাঠপাড়া) গ্রামের আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে (জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম আছে আজিজুর রহমান)। চার্জশিটে যার বয়স উল্লেখ করা হয় ৩০ বছর। মামলায় ৮ ও ৯নং আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের তসলিমের ছেলে হাশেম আলী ও নুর ইসলামের ছেলে শাহাজানকে।

চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি বদলি করে যশোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে মামলাটির নম্বর হয় এসটিসি ৬১/১২। আদালত পলাতক আসামি আব্দুল আজিজসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

পুলিশ ২০১২ সালের ১ মার্চ প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। আদালত আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আব্দুল আজিজ ২০১২ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পান। আসামি আব্দুল আজিজের আইনজীবী ছিলেন যশোর বারের সাবেক সম্পাদক শাহানুর আলম শাহিন। সেই থেকে আহাদ আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেন। তবে তিন বছর আগে আসামি আব্দুুুল আজিজ কাতারে চলে যান। প্রবাসে চলে যাওয়ায় আসামি আব্দুল আজিজ আদালতে গরহাজির থাকেন। ফলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানার ভিত্তিতে ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) রাতে চৌগাছা থানা পুলিশের এএসআই আজাদের নেতৃৃৃৃত্বে পুলিশ প্রকৃত আসামি আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে বাদ দিয়ে মৃত আহাদ আলী দফাদারের ছেলে আব্দুল আজিজকে (একই গ্রামের দফাদারপাড়ার বাসিন্দা) গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।

জজ আদালত শীতকালীন অবকাশে থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আব্দুল আজিজকে তোলা হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে নিরপরাধ আব্দুল আজিজ কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।

চৌগাছা থানা পুলিশের এএসআই আজাদ বলেন, আসামির নাম ঠিকানা সঠিক থাকার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আব্দুল আজিজের পরিবার থেকেও জানানো হয়নি যে তিনি মামলার আসামি না।