Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হারাম সম্পদ থেকে বাঁচতে হবে

সিউল, ১৮ মে ২০১৪:

সূরা বাকারায় আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না। আর জেনেশুনে মানুষের সম্পদের কিছু অংশ অন্যায়ভাবে খাওয়ার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে (মামলা দায়ের করে) নিয়ে যেয়ো না।’ কোরআনে কারিমের এ আয়াতটিতে হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং তা ভোগ করার নিষেধাজ্ঞাটি অত্যন্ত ব্যাপক পরিসর নিয়ে বিবৃত করা হয়েছে।

chardike-ad

প্রতিটি দেশ, জাতি ও ধর্মের কাছেই এটি একটি সর্ববাদীসম্মত মত যে, সম্পদ উপার্জনের কিছু পথ হচ্ছে পছন্দনীয় ও বৈধ আর কিছু আছে অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ। যেমন চুরি, ডাকাতি, ধোঁকা, প্রতারণা ইত্যকার গর্হিত কাজগুলো গোটা দুনিয়াই অপরাধ মনে করে। কিন্তু সেই উপার্জন মাধ্যমগুলোকে বৈধ বা অবৈধভাবে চিহ্নিত করার এমন কোনো মানদ- পৃথিবীর কোনো জাতির কাছেই নেই, যা সারা দুনিয়ার কাছে একযোগে বরণীয় ও স্বীকৃত হতে পারে। এর জন্য সঠিক ও যৌক্তিক মানদ- কেবল সেটাই হতে পারে যা রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ওহির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ মানুষের স্রষ্টাই তাদের প্রকৃত কল্যাণ সম্পর্কে যথার্থভাবে জ্ঞাত। এজন্য ইসলাম হালাল-হারাম ও বৈধ-অবৈধ সম্পর্কে যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, হয়তো তা সরাসরি হাদিস থেকে সংগৃহীত কিংবা ওহি থেকে উদগত। এ নীতিমালার প্রতিটি পর্যায়ে পূর্ণ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যেন কোনো মানুষই নিজের পরিশ্রম ও সাধনা অনুপাতে জীবন ও জীবিকার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

halal (1)কোনো মানুষ যেন অন্যের অধিকার হরণ করে কিংবা অন্যের ক্ষতিসাধন করে সব অর্থকড়ি গুটিকয়েক মানুষের হাতের পুতুল না বানাতে পারে; বরং যে ব্যক্তিই কোনো মালিকানাস্বত্ব লাভ করবে তা খোদায়ি বিধি মোতাবেক হতে হবে। উলি্লখিত আয়াতে আল্লাহপাক সব ধরনের নিষিদ্ধ পন্থাকে একবাক্যে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। এর মধ্যে সুদ, জুয়া, ঘুষ, ভেজাল, ধোঁকা, প্রতারণা, মিথ্যা মামলাসহ সব ধরনের অবৈধ আয়ের উৎসকে শামিল করে দেয়া হয়েছে।

‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ এখানে একটি বিষয় গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। এখানে একটি প্রশ্নের ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, তোমরা যারা অন্যের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করছ, তা একটু ভেবে দেখ; অন্যরাও নিজেদের সম্পদ ঠিক সে রকম ভালোবাসে, যেমন তোমরা নিজেদের সম্পদকে ভালোবাস। তারা তোমাদের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে যতটা কষ্ট তোমাদের হতো, ঠিক ততটা কষ্ট তাদেরও হয়। কাজেই অনধিকার চর্চার আগে সেটাকে নিজের সম্পদ হিসেবে একটু কল্পনা করে দেখ।

এছাড়াও আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে আরেকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যখন একজন মানুষ অন্যের সম্পদে অনধিকার চর্চা করে এবং নির্দ্বিধায় তা করতেই থাকে, তো এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দাঁড়ায়, অন্য লোকও তার সম্পদে অনধিকার চর্চা করতে থাকে। এ হিসেবে কারও সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রকারান্তরে নিজের সম্পদেরই অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনে। চিন্তা করে দেখুন! যখন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে ভেজালের সয়লাব শুরু হয়ে যায়। যখন ঘি বিক্রেতা ঘির মাঝে তেল বা চর্বি মিলিয়ে অধিক মুনাফা লুটে, সে তো মনে করে সব ঠিক আছে। কিন্তু যখন তার দুধের প্রয়োজন হয় তো গোয়ালা দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে দেয়। বিভিন্ন মশলাপাতি প্রয়োজন হয় তো সেখানে ভেজাল থাকে। মেডিসিন আনতে গেলে ভেজাল ছাড়া পাওয়া যায় না। এভাবে এক জায়গায় ভেজালের আশ্রয় নিয়ে সে যত অর্থ উপার্জন করেছিল, দশ জায়গায় ভেজাল ঘটিয়ে তার পকেট থেকে সে সব টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বেচারা তো অতিরিক্ত অর্থ লাভের আনন্দে বগল বাজাতে থাকে, একটু তাকিয়েও দেখে না পরিণামে তার কী হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করতে চায়, সে নিজের সম্পদেই অন্যের অনধিকার চর্চার পথ খুলে দেয়। এমনিতে অবৈধ আয়-উপার্জন তো প্রতিটি মুহূর্তেই সমান অবৈধ, তবুও কোনো পবিত্র সময়ে বা পবিত্র স্থানে এ অবৈধ কাজ করা হলে এর কার্যকারিতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে। কেননা এ মাসে একজন মুসলমান আল্লাহর হুকুম পালনার্থে নিজের বৈধ ও ন্যায্য চাহিদাকেই (যেমন_ পানাহার, সঙ্গম) পরিত্যাগ করে। তাহলে এটা বড়ই লজ্জার কথা যে, যে জিনিস স্থায়ীভাবে হারাম ওই জিনিসটিই সে পরিত্যাগ করে না। এজন্য পবিত্র রমজান মাসে হালাল রুজি কামানোর জন্য অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। হারাম থেকে সযত্নে বেঁচে থাকার জন্য এবং হালাল পন্থায় অর্থ উপার্জনের জন্য কোরআন ও সুন্নায় বিভিন্ন শিরোনামে প্রচুর তাগিদ দেয়া হয়েছে। মানুষের জীবন ও চরিত্র গঠনে হালাল রুজির অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। যদি তার পানাহার হালাল না হয় তাহলে তার উন্নত আখলাক ও নেক আমলের প্রত্যাশা করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

আল্লাহপাক বলেন, ‘হে রাসূল সমাজ! তোমরা হালাল ও পবিত্র খাদ্য আহার করো এবং সৎ কাজে নিয়োজিত থাকো। আমি তোমাদের কার্যাবলি সম্পর্কে খুব ভালোই অবগত আছি।’ এ আয়াতে হালাল খাবারের সঙ্গে সৎ কাজকে সংযুক্ত করে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন মানুষ থেকে সৎকাজ ও নেকআমল তখন প্রকাশ পাবে যখন তার পানাহারসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও হালাল হবে। এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হারাম খাদকের দোয়া কখনও কবুল হয় না। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ ইবাদত-বন্দেগিতে অনেক কষ্ট স্বীকার করে। এরপর দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ইয়া রাবি্ব বলে কাতরস্বরে ডাকতে থাকে। অথচ তার পানাহার হারাম, তার পোশাক হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে? হজরত সাআদ বিন আবুু ওয়াক্কাস (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করেছিলেন, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমার সব দোয়াই কবুল করে নেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাআদ নিজের খাবার-দাবার হালাল ও পবিত্র রেখ, তোমার দোয়া অবশ্যই কবুল হবে। সেই সত্তার কসম! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন! একজন মানুষ যখন তার পেটে হারাম খাবার সরবরাহ করে তো ৪০ দিন পর্যন্ত তার কোনো দোয়া কবুল হয় না। আর হারাম মাল খেয়ে ব্যক্তির শরীরের যে গোশত প্রবৃদ্ধি লাভ করে, সে গোশতের জন্য জাহান্নামের আগুনই অধিক উপযোগী। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হারাম সম্পদ অর্জন ও অন্যের অধিকার হরণ করা থেকে হেফাজত করুন এবং হালাল রুজি উপার্জনের তৌফিক দান করুন।

মুলঃ সামীম মোহাম্মদ আফজাল, অনুবাদ : হাসান মুহাম্মাদ শরীফ