Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর ২১ বছর পূর্তি

bangladesh-pakসত্যি! সময় কিভাবে বয়ে যায়। মনে হয় যেন সেদিনের কথা। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব করলে কেটে গেছে ২১টি বছর। দেড় যুগ পেরিয়ে প্রায় দুই যুগ হতে চললো। ১৯৯৯ সালের ঠিক আজকের দিনেই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

পাকিস্তান মানে কিন্তু এখনকার ভাঙাচোরা, তারকাবিহীন দুর্বল পাকিস্তান নয়। যে দলে বাবর আজম ছাড়া সে অর্থে এখন আর কোন বিশ্ব মানের পারফরমার নেই। তখনকার পাকিস্তান মানে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। যে দলের ফাস্ট বোলিং সন্দেহাতীতভাবেই তখন বিশ্ব সেরা।

chardike-ad

সুলতান অন সুইং ওয়াসিম আকরাম, প্রচন্ড গতির ওপর সুইং আর বিধ্বংসী ইয়র্কারে সিদ্ধহস্ত ওয়াকার ইউনিস এবং গতি সম্রাট শোয়েব আখতার তখন পাকিস্তানের ফ্রন্টলাইন বোলার। সঙ্গে ইংলিশ কন্ডিশনে কার্যকর সিমিং অলরাউন্ডার আজহার মাহমুদও ছিলেন। স্পিন ডিপার্টমেন্টও অনেক সাজানো। সাকলাইন মুশতাকের মত বিশ্বের সবসময়ের অন্যতম সেরা অফস্পিনার এবং শহিদ আফ্রিদির লেগস্পিন দলটির বাড়তি শক্তি।

ব্যাটিংয়ের কথা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম উল হক, ইজাজ আহমেদ আর সেলিম মালিক, সাথে মঈন খান- সব মিলে পাকিস্তান তখন এক দারুণ সমৃদ্ধ ও শক্তিশালি দল। অথচ আজকের দিনে (৩১ মে) ২১ বছর আগে সেই ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষকেই ঘায়েল করেছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বাংলাদেশ।

মেহরাব অপি, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, নাইমুর রহমান দুর্জয় খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, শফিউদ্দীন বাবু আর নিয়ামুর রশিদ রাহুল বুক চিতিয়ে লড়ে ৬২ রানে হারিয়ে দিয়েছিলেন সেই বিশ্বকাপের রানার্সআপ পাকিস্তানকে।

নর্দাম্পটনের সেই ম্যাচের আগে পাকিস্তানিরা যেন টগবগ করে ফুটছিল। বাজির দরও ছিল ওয়াসিম আকরাম বাহিনীর পক্ষে। পাকিস্তানিদের সেটা ছিল গ্রুপের তিন নম্বর ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ আর দ্বিতীয় খেলায় স্কটল্যান্ডকে ৯৪ রানে হারিয়ে জয়রথ সচল রাখতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিল ওয়াসিম আকরামের দল।

আর সেখানে বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল গ্রুপের শেষ ম্যাচটি খেলতে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল আসর শেষ করে বাড়ি ফেরা। সেখানে জয় খুব বড় লক্ষ্য ছিল না। টাইগারদের ভাবটা ছিল এমন, একটি জয়ের আশা নিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের মাঠে নেমে স্কটিশদের (২২ রানে) হারানোর মধ্য দিয়ে সে লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। শেষ ম্যাচ খেলে এখন খুশি মনে দেশে ফেরা।

জয়ের চেয়ে আসর শেষ করাই ছিল যে ম্যাচে টিম বাংলাদেশের লক্ষ্য। আর তাই দুই ফ্রন্টলাইন পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত ও মঞ্জুরুল ইসলামকে বাইরে রেখে ঐ আসরে যে ক্রিকেটার একদমই সুযোগ পাননি, সেই অলরাউন্ডার নিয়ামুর রশিদ রাহুলকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানান পাকিস্তান অধিনায়ক। ওপেনার বিদ্যুৎ (৬০ বলে ৩৯), আকরাম (৬৬ বলে ৪২), সুজন (৩৪ বলে ২৭), বুলবুল (১৫), দুর্জয় (১৩), নান্নু (১৪), পাইলটের (১৫) ব্যাটে বাংলাদেশ ২২৩ রানের মাঝারি স্কোর গড়ে।

ইংলিশ কন্ডিশনে ঐ রান একদমই কম নয়। তবে সে রান ডিফেন্ড করার জন্য যেমন ধারালো বোলিং দরকার, বাংলাদেশের তা ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা দুই প্রধান পেসার শান্ত ও মঞ্জুৃ ছিলেন বিশ্রামে। সবাই ভেবছিলেন পাকিস্তানিরা অনায়াসে ঐ রান টপকে যাবে।

কিন্তু নতুন বলের বোলার শান্ত ও মঞ্জু ছাড়া খালেদ মাহমুদ সুজন বোলিংয়ের সূচনা করেই ব্রেক থ্রু’ দেন। তার প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই গালিতে মেহরাব অপির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফ্রিদি। সেই থেকেই উজ্জীবিত খালেদ মাহমুদ সুজন, অনুপ্রাণিত পুরো দল।

পরবর্তীতে ইনজামাম উল হক আর সেলিম মালিকও হন সুজনের শিকার। সুইং আর কাটারে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়ান ইনজামাম আর সেলিম। তারপর আজহার মাহমুদ (২৯), ওয়াসিম আকরাম (২৮) ও মইন খান শেষদিকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও পারেননি।

সুজনের ১০ ওভারে ৩১ রানে ৩ উইকেটের সঙ্গে পেসার শফিউদ্দীন বাবু (১/২৬), রফিক (১/২৮), দুর্জয় (১/২০ ) ও নান্নুর (১/২৯) সুুনিয়ন্ত্রিত বোলিং, সময়োচিত ব্রেক থ্রু এবং অসাধারণ ফিল্ডিংয়ের কৃতিত্বের কাছে একপর্যায়ে গিয়ে হার মানতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা।

জয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই সাকলাইন মুশতাকের রান আউটের সিদ্ধান্ত থার্ড আম্পায়ারের কাছে যেতেই মাঠে ঢুকে পড়েন অন্তত হাজার দুয়েক বাংলাদেশি সমর্থক। নর্দাম্পটনশায়ারে আকাশে পতপত করে ওড়ে লাল সবুজ পতাকা।

অবিস্মরণীয় এ জয় পরবর্তীতে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পেছনেও রেখেছে বড় ভূমিকা। আইসিসি কর্তারা ধরেই নেন, যে দল ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই পাকিস্তানের মত কঠিন শক্তিকে হারাতে পারে, তাদের মধ্যে আছে অমিত সম্ভাবনা। তারা টেস্ট খেলার দাবিদার। সে ভাবনা থেকেই ২০০০ আসলে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ।