Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মধ্য শাবানের রাত

সিউল, ১০ জুন ২০১৪:

মুহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ

chardike-ad

হিজরি ক্যালেন্ডারের ৮ম মাস হলো শাবান। তারপরই আসে আরবি বর্ষ ক্যালেন্ডারের সেই মহিমান্বিত, গৌরবান্বিত ও তামাম মুসলিম উম্মাহর কাঙ্ক্ষিত মাস ‘পবিত্র রমজান’। যে মাসে অবতীর্ণ হয় সর্বশেষ আসমানি কিতাব, মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারিম। রমজানে পুরো মাস সিয়াম সাধনার লক্ষ্যে শারীরিক ও মানসিক পূর্বপ্রস্তুতির জন্য শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) কে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো পূর্ণ মাসে রোজা রাখতে দেখিনি। আর তাকে আমি শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি।’ (বোখারি)।

‘শব’ ফারসি শব্দ। অর্থ-রাত। আর বারাআত আরবি শব্দ। অর্থ-মুক্তি, নাজাত, দায়মুক্তি ইত্যাদি। শব্দটির ব্যবহার উর্দু, ফারসি এবং বাংলাতেও দেখা যায়। ফারসি ‘শব’ শব্দটির ব্যবহার কোরআন ও হাদিসে না থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান’ বা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবেবরাত’ বলে গণনা করা হয়। যাকে অনেকে ‘ভাগ্যরজনী’ও বলে থাকেন।

amarghumpayna_1310911069_1-054_1_সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা শাবানের ১৫ তারিখ রাতে ঘোষণা করেন যে, তিনি তার সব মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দেবেন শুধু মোশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত।’ (ইবনে মাজাহ)। শবেবরাত দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমান বিশেষত বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতিরই একটি অংশে পরিণত হয়েছে। এ রজনীতে ওয়াজ-নসিহত করার আদেশও নেই, আবার নিষেধও নেই। তবে হাদিস শরিফে এ রজনীতে দোয়া কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। ১. রজব মাসের প্রথম রাতে, ২. শবেবরাতের রাতে, ৩. শবেকদরের রাতে, ৪. ঈদুল ফিতরের রাতে, ৫. ঈদুল আজহার রাতে।’ (মা ছাবাত বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি)।

যেহেতু শবেবরাতের নফল ইবাদত সম্পর্কে জোর তাগিদ নেই আবার ওই রাতে ইবাদতে কোনো বাধাও নেই, তাই আমরা আমাদের ফরজ ইবাদত সম্পন্ন করার পর অতিরিক্ত হিসেবে নফল নামাজ, সালাতুত তাসবিহ, তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন শরিফ তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, জিকির-আজকার, দোয়া-এস্তেগফার, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা ইত্যাদি নেক আমল করতে পারি। ইমাম মুজতাহিদরা বলেন যে, ‘বরাতের রাত হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত, জিকির ও নামাজের রাত, ছদকা ও দান-খয়রাতের রাত, দোয়া ও জিয়ারতের রাত, দরুদ শরিফ পাঠ করার রাত এবং কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের রাত।’

শবেবরাতকে উদ্দেশ করে হালুয়া-রুটি বা অন্য কোনো বিশেষ খাবার তৈরি করা শরিয়তসম্মত নয়। তবে অসহায়, গরিব-মিসকিন, পথশিশুদের খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে এটি করলে তা দোষের নয়, বরং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফে সওয়াবই আশা করা যায়। আলোকসজ্জা, আতশবাজি ইসলাম ধর্মবিরুদ্ধ প্রথা। আলোকসজ্জা হচ্ছে গ্রিক ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথা। পর্যায়ক্রমে তা হিন্দু ধর্মে প্রসার লাভ করে। এগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে রাসূলে পাক (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর হবে তাদেরই সঙ্গে।’ (আহমদ, আবু দাউদ)। সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ।