মোহাম্মদ আল-আমিন (সিউল) ঃ দক্ষিন কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি ছাত্রদের একমাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশান ইন কোরিয়া’ (BSAK) গত ১৪~১৫ জুলাই ২০১২, দু’ দিন ব্যাপী জাঁক-জমক পুর্ন ‘জাগলো প্রাণে খুশির দোলা, লাল সবুজের মিলন মেলা’ শিরোনামে এক ব্যাতিক্রমধর্মী গ্রীষ্মকালিন গেট-টু-গেদার আয়োজন করে। গ্রীষ্মকালিন সেমিস্টার ২০১২ সালে যে সমস্ত বাংলাদেশী মেধাবী ছাত্ররা দঃ কোরিয়ার বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন, তাদেরকে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা সনদ সহ সংবর্ধনা দেয়া হয়। উল্লেখ্য, বিএসএকের এর পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত তৃতীয় বারের মত এই ধরনের আয়োজন করা হলো। অপরুপ সুন্দর প্রকৃতি ঘেরা দঃ কোরিয়ার আনমেওন-দো নামক দ্বীপে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দঃ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জনাব শহীদুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি জনাব নাসির শাহরিয়ার এরশাদ এবং তাদের পরিবারবর্গ। কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাংলাদেশি ছাত্রদের অভুতপূর্ব এক মিলন মেলায় পরিনত হয় অনুষ্ঠানটি। বিদেশের মাটিতে একসাথে অসংখ্য ছাত্রের সম্মিলন সত্যিই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে। ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনকারী একজন তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন এটি সত্যিই ভাল উদ্যোগ, আপন -জনদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সম্মাননা পেয়ে আমি সত্যিই অভিভুত, এ ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক সে কামনাই করছি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যদি এ সব তরুন বিজ্ঞানীদের কে একত্রিত করে সংবর্ধনা দেয়া হয় তাহলে তারা দেশের কাজে উৎসাহ পাবেন এবং অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। মাস্টার্স ডিগ্রী প্রাপ্ত এক শিক্ষার্থী বলেন দীর্ঘ প্রবাস জীবনে এত আনন্দময় মুহুর্ত আর আসেনি।
অংশগ্রহনকারী উপস্থিত ছাত্ররা তাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন কারো কোন অনুদান ছাড়াই নিজেদের টাকায় এত বড় অনুষ্ঠানই প্রমান করে আমরা পারব, যদি মেধাবী তরুনরা এভাবে দেশের প্রতিটি কাজেই সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসে। যে মুহুর্তে জাতি হিসেবে আমাদের পরিচিতি মোটেও সুখকর নয়, ঠিক সেই মুহুর্তে এ রকম ভাল উদ্যোগ আমাদের মনে আশার সঞ্চার করে। দূর্নীতি আর অস্থির রাজনীতির কারনে বিদেশে এমনিতেই বাংলাদেশের ভাবমুর্তি হতাশা ব্যাঞ্জক তবুও আমরা চেষ্ঠা করছি নিজেদের চেষ্টায় এমন কিছু করা যাতে এ দেশ আমাদের মেধাবী জাতি হিসাবে চিনতে পারে সে সাথে এ দেশের গবেষণা কর্মে বাংলাদেশি ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি মিলে। উল্লেখ্য, দঃ কোরিয়ায় অনেক বিদেশী ছাত্রদের যেমন চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইউনিক প্লাটফর্ম থাকলেও শুধু বাংলাদেশী ছাত্রদের কোন প্লাটফর্ম ছিলনা। বিএসএকে সে অভাব পুরনে বিরাট ভুমিকা রেখেছে। বিএসএকের একজন এক্সিকিউটিভ মেম্বার জানান গত কয়েক বছর যাবত আমরা চেষ্টা করছি যাতে বিদেশে এসেও একসাথে সবাই সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে পারি, অন্তঃত সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারি সে সুত্রেই বিএসএকের পথ চলা, তৃতীয় বারের মত এই সংবর্ধনার আয়োজন করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। উল্লেখ্য,একমাত্র বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশান ইন কোরিয়া ছাড়া এদেশে বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য এ ধরনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় না। প্রবাসী ছাত্রদের লেখা দিয়ে ‘মলাটবদ্ধ কালধ্বনি’ নামক একটি ই-বুক এর মোড়ক উন্মোচন শেষে বিএসএকে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধান অতিথি জনাব শহীদুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন যাবত এ ধরনের একটি প্লাটফর্ম আমারা আশা করছিলাম যেখানে সকল ছাত্রদের কে একসাথে পাওয়া যাবে, বিলম্বে হলেও বিএসএকে সে কাজ করতে পেরেছে বলে আমরা খুশি। তিনি আরো বলেন, দঃ কোরিয়ায় আমাদের পরিচিতি শ্রমিক সরবরাহকারী দেশ হিসেবে, কিন্তু গবেষনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশী মেধাবীরা যে অবদান রাখছে সে কথা আমাদেরকেই তুলে ধরতে হবে। বিএসএকে সে ক্ষেত্রে প্রধান ভুমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এক নবীন তার অনুভূতিতে বলেন, বিদেশে এসে একসাথে অনেক বাংলাদেশি ছাত্র দেখে সত্যিই অবাক লাগছে! বিএসএকের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অনেকের সঙ্গেই তিনি পরিচিত হয়েছেন বলে জানান। একজন পিএইচডি ছাত্র জানান শুরুতে ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা পরিচিত হই, তার পরেই এত বড় আয়োজনের কথা মাথায় আসে, ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে আনুষ্ঠানের চিন্তা ভাবনা আছে। উল্লেখ্য, বিএসএকের ফেসবুক গ্রুপে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৩৭৫ জন, এবং www.bsak.org নামে একটি হোমপেজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে যাতে দঃ কোরিয়াস্থ সব বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের অনেক তথ্য রয়েছে। কোরিয়ার এসে যদি কোন ছাত্র বিপদে পড়ে তাহলে যাতে সহজেই সবাই মিলে তাকে সাহায্য করতে পারে সেই লক্ষ্যই তারা কাজ করছেন বলে জানান। এই ওয়েবপেজে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশীপের ইনফরমেশানও রয়েছে, দেশে থেকেই যাতে কোন মেধাবী ছাত্র জানতে পারে কোরিয়ার উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে। প্রতিযোগীতা মূলক বিশ্বে মেধার রাজ্যে জায়গা করে নিতে হলে এ ধরনের ইউনিক প্লাটফর্ম গুরুত্ব পুর্ন ভুমিকা রাখবে বলে অনেকেই মতামত দেন। দেশের মাটিতে যা এতোদিন সম্ভব হয়নি তাই বাস্তবায়ন করে দেখালেন বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একঝাঁক তরুন মেধাবী।