টেলিটকের ৩ হাজার কোটি টাকার ইউনিয়ন পর্যন্ত ফোরজি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেওয়া তিন চীনা প্রতিষ্ঠানকেই অযোগ্য ঘোষণা করেছে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ আগে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটটি তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে মতামত চেয়েছে বলে জানিয়েছেন টেলিটকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তিনি টিবিএসকে বলেন, ‘মূল্যায়ন কমিটি তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই নন-রেসপন্সিভ (নির্দেশনা অমান্যকারী) হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টেলিটকের এই প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছিল। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থায়ন করার কথা ছিল চীন সরকারের, বাকি এক-তৃতীয়াংশ অর্থ আসত বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে।
গত বছরের ১৬ জুন চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যালয় ইআরডিকে চিঠি দিয়ে তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানানোর সুপারিশ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএমইসি), চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিআইটিসিসি) ও ইউনান কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস গ্রুপ কোম্পানি (ওয়াইসিআইএইচ)।
এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে টেলিটক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দরপত্র আহ্বান করে।
তবে টেলিটকের কর্মকর্তারা ও কারিগরি কমিটির এক সদস্য জানান, সিআইটিসিসি ও ওয়াইসিআইএইচ দরপত্রের শর্ত পূরণ না করে কার্যত সিএমইসির জন্য প্রতিযোগিতা ছেড়ে দেয়।
এমনকি সিআইটিসিসি ও ওয়াইসিআইএইচ দরপত্রের জন্য চাওয়া ৩০ লাখ ডলারের সিকিউরিটি ডিপোজিটও দেয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠান দুটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পরিবর্তে একাধিক কোম্পানির তৈরি সরঞ্জাম বা পণ্য প্রস্তাব করে। অথচ দরপত্রের শর্ত ছিল, শুধু একক পণ্য প্রস্তাব করতে হবে; কোনো বিকল্প পণ্য দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ একটি কোম্পানির পণ্যই থাকতে পারবে।
অন্যদিকে সিএমইসি একাধিক অখ্যাত প্রস্তুতকারকের বিকল্প পণ্যের প্রস্তাব করেছে। বিকল্প পণ্যের নাম না দেওয়ার শর্ত থাকায় এটাও নিয়মের লঙ্ঘন। এসব প্রস্তাব টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর মান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন টেলিটক কর্মকর্তারা।
এই ঘটনাপ্রবাহের ফলাফল সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করে নুরুল মাবুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারের মতামতের জন্য অপেক্ষা করব।’
দেশের সবচেয়ে দুর্বল মোবাইল অপারেটর টেলিটক। অপারেটরটির টাওয়ারের সংখ্যা ৩ হাজার ৩২৩টি ও গ্রাহকসংখ্যা ৬৫.৬ লাখ। টেলিটকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ছুঁই ছুঁই।
এ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পেরর আওতায় ৫০০টি নতুন টাওয়ার নির্মাণ, টুজি ও ফোরজি সক্ষমতার জন্য ১ হাজার ২০০ টাওয়ারের সরঞ্জাম প্রতিস্থাপনসহ ২ হাজার টাওয়ারের জন্য সরঞ্জাম প্রতিস্থাপন, ৭৪০টি সাইটে স্পেকট্রাম আপগ্রেড, কোর নেটওয়ার্ক ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, পরিদর্শন, পরীক্ষণ ও প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল।