Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পোশাক শিল্পে অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছে বায়াররা

garments

উৎপাদিত পণ্য সময়মতো বন্দরে নিতে না পারায় দেশের তৈরী পোশাক শিল্পে প্রতিদিনই বাড়ছে স্টকলট। আমদানি করা কাঁচামাল বন্দর থেকে ছাড়াতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে কোনো না কোনো নামকরা কোম্পানির ক্রেতাদের সফর। আর যারা আগেই পণ্যের অর্ডার দিয়েছিলেন, সময়মতো ডেলিভারি না পাওয়ার আশঙ্কায় অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছেন তারা। সব মিলিয়ে ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে চোখে অন্ধকার দেখছেন রফতানি আয়ে ৮০ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী তৈরী পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। পোশাক শিল্প অবরোধের আওতামুক্ত ঘোষিত হলেও তা থেকে কোনো সুবিধা আদায় করতে পারছেন না তারা।

chardike-ad

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ কাভার্ড ভ্যান ঢাকা থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যেতো সেখানে বর্তমানে যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০টি। অন্য দিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসছে ৩০ থেকে ৪০টি কাভার্ড ভ্যান, যেখানে অবরোধের আগে আসত ৩০০ থেকে ৪০০টি। অবরোধের তীব্রতা যতই বাড়ছে কাভার্ড ভ্যান পরিবহনের সংখ্যা ততই কমছে দাবি করে পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা জানান, পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় প্রতিদিনই স্টকলট হচ্ছে কোনো না কোনো কোম্পানির অর্ডার। আর কাঁচামাল সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা। স্বাভাবিকের প্রায় সাত গুণ ভাড়া দিয়ে জাহাজের পণ্য বিমানে পাঠাতে গিয়ে পথে বসছেন রফতানিকারকেরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা জানান উদ্যোক্তারা।

বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তৈরী পোশাক শিল্প খাতে এখন অর্ডারের মওসুম চলছে। সাধারণত বছরের প্রথম দিনগুলোতে বিদেশী ক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে ক্রিসমাস শেষের এই দিনগুলো। এবারো নির্ধারিত সফর ছিল অনেক নামকরা কোম্পানির প্রতিনিধির। কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বেশির ভাগ বায়ারই তাদের নির্ধারিত সফর বাতিল করছেন। আবার অনেকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় এসে ওই সব দেশে ডেকে নিচ্ছেন বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের। এতে কেবল খরচই বাড়ছে না, সশরীরে কারখানা সফর করার ফলে বায়ারদের মধ্যে বাড়তি আস্থা জন্মানোর কারণে বাড়তি যে অর্ডার পাওয়া যেত তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীন বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাধ্য হয়েই আমরা আমাদের কারখানাগুলোর মান রাতারাতি উন্নতি করেছি। কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, ফায়ার সেফটি, বিল্ডিং সেফটি এবং কমপ্লায়েন্সসহ সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমরা এরই মধ্যেই একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছি। আমাদের প্রস্তুতি ছিল, এবারের মওসুমে বায়ারদের আমাদের এ শক্ত অবস্থানটি সরাসরি দেখাব। কিন্তু সর্বনাশা রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের সব প্রস্তুতি মাটি করে দিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই বায়ারদের এ দেশে আসতে রাজি করাতে পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ছয় মাস পর রফতানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বায়ারের সাথে দেখা করার জন্য গতকাল ব্যাংকক যাওয়ার প্রাক্কালে বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সদ্যবিদায়ী সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমার মতো দেশের অনেক উদ্যোক্তাই এখন দেশের বাইরে গিয়ে বায়ারদের সাথে বৈঠক করছেন। অনেক বায়ার আমাদের ইউরোপে যাওয়ার জন্য বলছেন। আবার অনেকে আগের দেয়া অর্ডারও কমিয়ে দিচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের পক্ষে সময়মতো সব পোশাক রফতানি করা সম্ভব হবে না। এতে করে আমাদের মার্কেট দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। গত কয়েক দিনের অবরোধে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অর্ডার অন্যত্র সরে গেছে। আমাদের রাজনীতিকেরা দেশটাকে অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত