রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিরল খনিজ যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে প্রস্তুত পুতিন

 

chardike-ad

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল খনিজ সম্পদের প্রবেশাধিকার দিতে প্রস্তুত, যার মধ্যে রুশ নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে খনিজসম্পদও রয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, তিনি মার্কিন অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহী, যার মধ্যে রাশিয়ার ‘নতুন ভূখণ্ডে’ খনিজ খনন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ‘নতুন ভূখণ্ড’ বলতে তিনি পূর্ব ইউক্রেনের সেই অংশগুলোর কথা বলেছেন, যা রাশিয়া তিন বছর আগে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের মাধ্যমে দখল করেছে।

এ প্রস্তাবের আওতায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম আহরণ ও সরবরাহ সংক্রান্ত সহযোগিতা হতে পারে, যা বিশ্ববাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে বলে জানান পুতিন।

পুতিনের বক্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার ইউক্রেনকে খনিজ সম্পদের কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ইউক্রেনীয় এক মন্ত্রীর দাবি, এই বিষয়ে একটি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পুতিন ট্রাম্পের চাপের বিপরীতে বলেন, রাশিয়া তাদের খনিজ সম্পদ আহরণে ‘বিদেশি অংশীদারদের’ সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনের চেয়ে অনেক বেশি খনিজ সম্পদ রয়েছে।

পুতিন বলেন, “নতুন ভূখণ্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমরা বিদেশি অংশীদারদের আকৃষ্ট করতে প্রস্তুত, যা আমাদের ঐতিহাসিক ভূখণ্ডের জন্য উপকারী হবে।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সাইবেরিয়ার ক্রাসনোয়ারস্ক অঞ্চলে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে সহযোগিতা করতে পারে। এই অঞ্চলে রুশ অ্যালুমিনিয়াম নির্মাতা রুসালের বৃহত্তম গলন কারখানা রয়েছে।

পুতিনের মন্তব্যের পর মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, এটি সম্ভাবনার একটি বিশাল ক্ষেত্র খুলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিরল খনিজ চায় এবং আমাদের তা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের ওপর খনিজসম্পদ হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি করার চাপ ক্রমশ বাড়ছে। ইউক্রেনের হিসাব অনুসারে, বিশ্বের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রায় ৫ শতাংশ দেশটির ভূখণ্ডে রয়েছে। তবে, রাশিয়া আগ্রাসনের পর গত তিন বছরে এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করেছে।

ট্রাম্প চলতি মাসে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে এবং তিনি চান যে এই পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাক।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই পরিমাণ সহায়তার হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তিনি চান যে যেকোনও চুক্তিতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

সোমবার ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলগা স্টেফানিশিনা বলেন, এই চুক্তি নিয়ে আলোচনাগুলো অত্যন্ত গঠনমূলক হয়েছে এবং প্রায় সব প্রধান বিষয়ে একমত হওয়া গেছে।

এদিকে, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও একটি অংশীদারত্বের প্রস্তাব দিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের শিল্প কৌশলবিষয়ক কমিশনার স্টেফান সেজুরনে একে ‘উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।