কাটা হলো কড়াই বিলের ৫ শতাধিক গাছ

 

chardike-ad

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দর্শনীয় স্থান কড়াই বিলের পাঁচ শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশুপালন খামার সমবায় সমিতির নেতাদের নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকৃতিপ্রেমী ও স্থানীয় লোকজন।

তবে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ বলছে, গাছ কাটার বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। তাদের অনুমতি না নিয়েই কাটা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনাজপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলায় কড়াই বিলের অবস্থান। জেলার ঐতিহাসিক রামসাগর, সুখসাগরের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেকটি স্থান এই বিল। বিশেষ করে শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে। দেখতে আসেন বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতিপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা। বিলের চারপাশের গাছগাছালি পাখিদের অভয়ারণ্য। ৫৬ একর আয়তনের বিলটি স্থানীয় মানুষের ধান ও মাছের বড় উৎস। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিলের মাঝ বরাবর প্রায় ২৮ একর আয়তনের পুকুর খনন করা হয়। পাড়ে লাগানো হয় কয়েক হাজার ফলদ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের গাছ। এসব উপেক্ষা করে গত আট দিন ধরে গাছগুলো কাটা হয়। এতে বাধা দেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। গাছগুলো কেটে ফেলায় দর্শনার্থীরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে শঙ্কা তাদের।

গত সোমবার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর বাধার মুখে কেটে ফেলা গাছগুলো জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে বিরল থানায় একটি মামলা করেছেন।

বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশুপালন খামার সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মিস্টার জর্জের নেতৃত্বে সমবায় সমিতি গঠন করে বিলটি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দিনাজপুরে আসলে ওই সমিতিতে অনুদান দেন এবং খাল কাটা কর্মসূচির আওতায় পুকুর খনন করা হয়। পাড়ে লাগানো হয় ফলদ, বনজ ও ফুলের গাছ। সমিতির সদস্যরা পুকুরে মাছ চাষ করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থায়ীভাবে পুকুরের মালিকানা পান। কয়েক বছর পরে উপজেলা প্রশাসন ইজারা বাতিল করলে মুক্তিযোদ্ধারা আদালতে মামলা করেন। সেই মামলা এখনও চলমান। এর মধ্যেই গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেন সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, পাঁচ শতাধিক ফলের গাছ চার লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

গত শুক্রবার বিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুকুরের পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে এখনও আমসহ বিভিন্ন জাতের অর্ধশতাধিক গাছ রয়েছে। আম গাছগুলোতে মুকুলও ধরেছে। পুকুরের চারপাশের পাড় ভেঙে গেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‌‘গাছগুলো যারা কেটেছে তাদের বিচার চাই। এখানে শীতকালে পাখি আসতো, এখন আসবে কিনা শঙ্কা আছে। গরমের সময় আমরা ছায়ায় বসতাম, নির্মল বাতাস পেতাম।’

স্থানীয় কৃষক ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘এটি আমাদের সম্পদ না হলেও গ্রামের কৃষকদের উপকারে আসতো। মুক্তিযোদ্ধাদের সমিতি নিজেদের সম্পদ মনে করে গাছগুলো কেটে ফেলেছে। আমরা ক্ষেতে কাজ করতে এলে রোদ লাগলে ছায়ায় যেতাম। শীতকালে পাখি আসতো। গাছ কেটে ফেলায় বঞ্চিত হলাম আমরা।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী আলী আহসান আল মুজাহিদ বলেন, ‘গত সোমবার ঘুরতে গিয়ে গাছগুলো কাটছে দেখতে পাই। এরপর গাছ কাটা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। এসিল্যান্ড আমাদের জানান এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বন বিভাগও জানে না। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তা এখানে এসে কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র দেখে অনুমোদন না থাকায় গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। এটি পর্যটন এলাকা। যারা গাছগুলো কেটেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমরা।’