Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাতক্ষীরায় আধুনিক প্রযুক্তিতে সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য

সাতক্ষীরায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সবজি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন চাষীরা। এরমধ্যে আশাশুনি উপজেলার ধান্যহাটি গ্রামের সবজি চাষী রুহুল কুদ্দুছ সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেক চাষী পুরনো পদ্ধতির চাষাবাদ বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক সরেজমিন প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

shobji_chashব্র্যাক কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সবজি চাষীদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলা করে দেশের ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষীদের আয় বাড়ানো। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি ও মৎস্য খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলার জন্য এলাকা উপযোগী শস্য বিন্যাস তৈরি, শস্য বহুমুখীকরণ, পরিবেশবান্ধব টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, কৃষক/ মৎস্যচাষীদের মাঝে সচেতনতামূলক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারি কৃষি ও মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ব্র্যাক এই প্রকল্পের আওতায় কৃষক ও মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে।

chardike-ad

ব্র্যাকের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা পেয়ে চাষী রুহুল কুদ্দুছ চলতি (খরিপ-২) মৌসুমের শুরুতে (জুন মাসে) তার ১ বিঘা জমিতে ৭ হাজার টাকা ব্যয় করে ঢেঁড়শ চাষ করেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ হাজার টাকার ঢেঁড়শ বিক্রি করেছেন, এখনো ঢেঁড়শ উঠছে। একই জমিতে তিনি ৯ হাজার টাকা ব্যয়ে বেগুনের চাষ করে ৩১ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি ও ২ হাজার ৫শ’ টাকা ব্যয়ে পুঁইশাক চাষ করে ৫ হাজার ৫শ’ টাকার পুইশাক বিক্রি করেছেন।

begun_chashচাষী রুহুল কুদ্দুছ জানান, ক্ষেত থেকে এখনো বেগুন ও পুইশাক উঠছে। এখনো অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ফসল উঠবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। একই জমিতে তিনি বরবটি, লাউ ও পেঁপের চাষ করেছেন। খুব শিগগিরই এ ফসল বিক্রয় করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, ইতোপূর্বে চাষাবাদ করে সংসার খরচটাই চলতো। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় অনেক গুণ বেশি লাভবান হয়েছেন। এখন সংসার খরচের পাশাপাশি টাকা সঞ্চয় করতে পারছেন এবং সংসার জীবনে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

একই গ্রামের চাষী জিয়ারুল ইসলাম তার এক বিঘা জমিতে ৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ঢেঁড়শ চাষ করে ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৫শ’ টাকা ঢেঁড়শ বিক্রি, ৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বেগুন চাষ করে ১৫ হাজার টাকা বেগুন, ২ হাজার ৫শ’ টাকা খরচে বরবটি চাষ করে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা বরবটি বিক্রি ও ২ হাজার টাকা খরচে পুইশাক চাষ করে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা পুুইশাক বিক্রি করেছেন। তিনিও রুহুল কুদ্দুছের মতো আয় করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।

puisakএছাড়া একই গ্রামের সীমা সোম, নিভা সোম, রিপা সোম ও সোমা সোমসহ ২০ জন চাষী ব্র্যাকের কর্মীদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং কুদ্দুছ ও জিয়ারুলের দেখাদেখি সবজি চাষ করেছেন। তারাও বেশ সফল হয়েছেন। আগামী রবি ও খরিপ-১ মৌসুমেও তারা এই জমিতে অন্য ফসল চাষাবাদ করবেন। ফলে বছরে তারা অভাবনীয় সফলতা অর্জন করতে পারবেন। চাষীরা এখন বাড়তি টাকা আয় করতে পেরে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি আরও জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন। ফলে তাদের পুঁজি বহুগুণ বেড়ে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম চাষীদের সবজি ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তিনি সবজি দেখে তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিষমুক্ত ফসল বাজারে সরবরাহ করে চাহিদা মেটানো ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে তিনি চাষীদের প্রতি আহ্বান জানান। এসময় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম, ব্র্যাকের উপজেলা ম্যানেজার ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।