বুধবার । ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক রাজনীতি ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮:৫৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

১৩ দল ও জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

এনসিপিকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে সরকার, অভিযোগ রাজনৈতিক নেতাদের


১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা । ছবি: পিআইডি

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে ঘিরে সরকারের পক্ষপাত এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা। তারা অভিযোগ করেন, এনসিপিকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ১৩টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আবদুল কাদের, জেএসডির তানিয়া রব, ১২-দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং গণফোরামের ডা. মিজানুর রহমান।

বৈঠক শেষে এবি পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, “ফ্যাসিবাদ নানা রূপে আজ রাজনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করেছে। সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ, এনসিপির নেতারাও জনমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নন।”

১২-দলীয় জোটের প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “কিছু দল প্রশাসনের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। এ বৈষম্য না কমালে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে।”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অভিযোগ করে বলেন, “এনসিপিকে যে ধরনের সরকারি প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের পথে অন্তরায়। উত্তরা মাইলস্টোন ট্রাজেডিও সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।”

এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ। এনসিপিকে নানা ভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।”

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, “৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও সমতাভিত্তিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। সচিবালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন বন্ধে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসাথে চলতে হবে।”

গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর বলেন, “সরকার এনসিপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্ন উঠে যায়। স্থানীয় নির্বাচন আগে করে জাতীয় নির্বাচনের মঞ্চ প্রস্তুত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাসিক বৈঠক চাই।”

এদিকে, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস  বলেছেন, এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো।’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য আরও দৃশ্যমান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকলেও এ বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই।”

বৈঠকে নেতারা দাবি করেন, জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর ঐক্য দেখতে চায়, যা বর্তমানে অনুপস্থিত। এই ঐক্য গড়ার দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে।