রবিবার । ডিসেম্বর ২১, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ৮ অগাস্ট ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

সমালোচনার মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন রুশনারা আলী


rushanara-aliসমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের গৃহহীনবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। পুরোনো ভাড়া‌টিয়া স‌রি‌য়ে ব্যক্তিগত একটি সম্পত্তির ভাড়া রাতারাতি ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে রুশনারা আলীর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী বলেন, তিনি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পদত্যাগ করছেন। তার দাবি, তিনি সব আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছেন এবং তার দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। তবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তার পদে থাকা সরকারের উচ্চাভিলাষী কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেবে।

গত বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে রুশনারা বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার বেথনালগ্রিন ও স্টেপনি আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সাল থেকে ওই আসনটি ধরে রেখেছেন রুশনারা।

লেবার পার্টির আরেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি স্বেচ্ছায় মন্ত্রীত্ব ছাড়েন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি।

টিউলিপ গত বছর দেশটির সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর জুলাইয়ে তাকে লেবার পার্টি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার) করা হয়েছিল।

রুশনারার পদত্যাগ যে কারণে:

পূর্ব লন্ডনের বো এলাকায় অবস্থিত রুশনারা আলীর ওই বাড়িতে মাসিক ৩ হাজার ৩০০ পাউন্ড ভাড়ায় চারজন ভাড়াটে থাকতেন। তাঁদের নির্ধারিত মেয়াদি চুক্তি শেষ হওয়ার পর গত নভেম্বরে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়। পরে বাড়িটি ভাড়ার জন্য ৪ হাজার পাউন্ড মাসিক ভাড়ায় আবার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ নিয়ে গৃহহীনদের দেখভালের দায়িত্ব থাকা ‘মিনিস্টার’ রুশনারা আলীর ব্যাপক সমালোচনা হয়।

এমপি হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটসে এই সম্পত্তির মালিক রুশনারা আলী সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি মালিকদের মাধ্যমে ভাড়াটে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সরকার জনগণকে অযৌক্তিক ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা দেবে।’

তবে এক ভাড়াটে লরা জ্যাকসন স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এটা একটা রসিকতা। এত ভাড়া আদায় করার চেষ্টা একপ্রকার চরম শোষণ।’

রুশনারা আলীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভাড়াটেরা চুক্তির পুরো মেয়াদ বসবাস করেছেন এবং চাইলে আরও থাকার সুযোগ ছিল। তবে তাঁরা নিজ ইচ্ছায় চলে যান।

অন্যদিকে রেন্টার্স রিফর্ম কোয়ালিশন ও ভাড়াটে অধিকার সংগঠন অ্যাকর্ন রুশনারা আলীর পদত্যাগ দাবি করে। অ্যাকর্নের কর্মকর্তা অ্যানি কুলাম বলেন, ‘তাঁর কর্মকাণ্ড রেন্টার্স রাইটস (ভাড়াটে অধিকার) বিলের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।’

রুশনারা আলী নিজেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘রেন্টার্স রাইটস বিলের’ পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়, কোনো বাড়িওয়ালা ভাড়াটেকে বের করে ছয় মাসের মধ্যে সেই বাড়ি বেশি দামে ভাড়া দিতে পারবেন না।

রুশনারার সমালোচনা করে কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হাউজিং (ছায়া আবাসন) সেক্রেটারি জেমস ক্লেভারলি বলেন, ‘এটি চরম ভণ্ডামির উদাহরণ। এমন একজনকে গৃহহীনবিষয়ক দায়িত্বে রাখা উচিত নয়।’

গ্রিন পার্টিও সমালোচনায় যোগ দিয়ে বলে, এ ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, ভাড়াটেদের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োজন, যেখানে থাকবে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং কোনো দোষ না করলে ভাড়াটে উচ্ছেদ নিষিদ্ধ করার বিধান থাকবে।