রবিবার । ডিসেম্বর ২১, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ৩:৪২ অপরাহ্ন
শেয়ার

যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠছে: জেলেনস্কি


Zelonoski
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার অস্বীকৃতির কারণে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে, ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি, রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে। কখন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে, আমরা জানি না। পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে।”

আগামী সোমবার জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তাঁকে শান্তি চুক্তিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবেন বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।

শুক্রবার আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, তিনি কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, বরং স্থায়ী শান্তির সমাধান চান। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ এ পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, “এটাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে কার্যকর পথ। যুদ্ধবিরতি কখনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না।”

ট্রাম্প বৈঠকের পর জেলেনস্কিকে ফোন করে স্থায়ী শান্তির প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “আগুন থামাতে হবে, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।” পরবর্তীতে জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে জানান, স্থায়ী শান্তির জন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং অধিকৃত অঞ্চল থেকে শিশুদের মুক্তি।

ট্রাম্পের অবস্থান নাটকীয়ভাবে পাল্টেছে। এর আগে তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে ছিলেন। ইউক্রেনও বরাবরই দাবি করে আসছিল, প্রথমে যুদ্ধবিরতি, পরে স্থায়ী সমাধানের আলোচনায় বসা। এমনকি ইউরোপীয় নেতাদেরও ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তার অগ্রাধিকার যুদ্ধবিরতির চুক্তি।

পুতিন আলোচনায় একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক অঞ্চল ছাড়তে হবে এবং বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে যুদ্ধ স্থগিত করবে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়, পরে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু হয়। বর্তমানে রাশিয়া লুহানস্কের প্রায় পুরোটাই এবং দোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই বলেছিলেন, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ভূখণ্ড বিনিময়ের বিষয় থাকতে পারে। এবার সেটিই জেলেনস্কির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু জেলেনস্কি কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, ডনবাস কখনো ইউক্রেন ছাড়বে না, কারণ রাশিয়া পরবর্তীতে এটিকে নতুন আগ্রাসনের অজুহাত বানাতে পারে।

কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে চাপ দিতে পারেন। সিবিএস জানিয়েছে, ইউরোপীয় নেতাদেরও ট্রাম্প বলেছেন, পুতিন ছাড় দিতে রাজি। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় ইউক্রেনীয় নেতাকে কী পরামর্শ দেবেন, ট্রাম্প এককথায় বলেন, “চুক্তি করুন।”

শুক্রবারের বৈঠকের পর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ট্রাম্প দাবি করেছেন, অগ্রগতি হয়েছে। পুতিনও বৈঠককে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সঙ্কটের মূল কারণগুলো আলোচনায় তোলা হয়েছে। এক রুশ কূটনীতিক তো এটিকে যুদ্ধ বন্ধের পথে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইউরোপীয় নেতারা জানিয়েছেন, জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের জন্য তারা প্রস্তুত। ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় কমিশনের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের, তার ভূখণ্ড বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারও বলেছেন, “আমরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন শান্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি।”

তবে কিয়েভের জনগণ এই বৈঠক নিয়ে বেশ হতাশ। অনেকেই মনে করছেন, আলোচনায় ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। পূর্ব দোনেৎস্কের সেনা সের্হি অর্লিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আলোচনা করতে হয়, এটা বুঝি। কিন্তু পুতিনকে লালগালিচা দেওয়া আর হাঁটু গেড়ে অভ্যর্থনা জানানো, এটা ভয়ংকর, এর কোনো মানে নেই।”