Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৪২ বছরে ৫২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ

wb_adb_jicaস্বাধীনতার পর থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই ৪২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দাতাগোষ্ঠি অনুদান ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে প্রায় ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এর সিংহভাগই দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি। আর একক দেশ হিসেবে সবচে বেশি সহায়তা দিয়েছে জাপান।
ঋণ সহায়তা, খাদ্য সহায়তা, বাজেট সহায়তা ও স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুদান বাবদ এই পরিমাণ অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), সুইডিস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা), জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল, নোরাডসহ ছোট বড় ৬৬টি দেশ ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে এই সহায়তা দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখন আর বাংলাদেশ সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। যাদের সঙ্গে এই মুহুর্তে সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হতে পারে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭টি। যাদেরকে বলা হয় লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপ। এদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বছরে কমপক্ষে ২/৩টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকগুলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক হিসেবেও পরিচিত।

chardike-ad

ইআরডি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা- এই তিন উন্নয়ন সহযোগী মিলে গত ৪২ বছরে বাংলাদেশকে দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় ৪৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বাকি অর্থ।

ইআরডি ও বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, আলোচনা সমালোচনার মধ্যে থেকেও বাংলাদেশকে এ ধরনের উন্নয়ন-সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দিয়েছে ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে সংস্থাটি সব মিলিয়ে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যা মোট বৈদেশিক সহায়তার ২৯ ভাগ। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করেছে। চলতি (২০১৪-১৫) অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সংস্থাটি বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে ছাড় করেছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি।
ইআরডি জানিয়েছে, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন-সহযোগী হলো জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত (২০১২-১৩ অর্থবছর) দেশটি ৭৭৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা দিয়েছে। তবে একক দেশ হিসেবে জাপানের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সংস্থা ঋণ, অনুদান ও খাদ্যসহায়তা দিয়ে থাকে। সদ্য সমাপ্ত ১০ম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, জাপান থেকে গত ৪২ বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা এসেছে। আর ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর ও এ বছরের মাঝামাঝি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের
বাংলাদেশ সফরে আরও ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি পাকাপোক্ত হয়েছে। ফলে জাপান থেকে পাওয়া বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছাড়কৃত বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে জাপান থেকে এসেছে ৩৩ কোটি ডলার। তবে এটি প্রাথমিক হিসাব। চূড়ান্ত হিসাব আরও কিছুদিন পরে পাওয়া যাবে।

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় জাপান। অবকাঠামো ও কারিগরী প্রকল্পেই জাপানের কাছ থেকে বেশি সহায়তা পাওয়া গেছে। তবে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর পর্যন্ত শুধু খাদ্যসহায়তাই দিয়েছে জাপান। এ সময় পর্যন্ত সাত কোটি ডলারের বেশি খাদ্যসহায়তা দিয়েছে দেশটি। এর প্রায় পুরোটাই অনুদান হিসেবে এসেছে। ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে জাপানের কাছ থেকে প্রথম ৯০ লাখ ডলার ঋণ পায় বাংলাদেশ। এর পর থেকে খাদ্য, অনুদান ও ঋণসহায়তা সমান্তরালে পেতে থাকে বাংলাদেশ। তবে ২০০২-০৩ অর্থবছরের পর থেকে আর খাদ্যসহায়তা পায়নি বাংলাদেশ। তবে জাপানি সাহায্যের বেশির ভাগই সহজ শর্তে, স্বল্প সুদের ঋণ। বর্তমানে জাপান শুধু উন্নয়ন প্রকল্পেই ঋণ ও অনুদান দিয়ে থাকে। এভাবে বদলে গেছে বাংলাদেশকে দেওয়া জাপানের উন্নয়ন সহায়তার চিত্র।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপানের কাছ থেকে মোট ৪২৭ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে। আর ৩১১ কোটি ডলার এসেছে অনুদান হিসেবে। অন্যদিকে সাড়ে ২৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ খাদ্যসহায়তা দিয়েছে জাপান। জাপানের সহায়তা নেওয়ায় বাংলাদেশের বড় সুবিধা হলো, কার্যত কোনও সুদ পরিশোধ করতে হয় না। সুদের অর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করার শর্তে এ বিশাল ছাড় পাওয়া গেছে।

জাপানের সহায়তা দেওয়ার চিত্রটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বছরওয়ারি সবচেয়ে বেশি ৩৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ ও অনুদান পাওয়া গেছে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে। গত তিন দশকের মধ্যে গত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সবচেয়ে কম সহায়তা পাওয়া গেছে। ২০০৩-২০০৪ থেকে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরের মধ্যে কোনও বছরই জাপানের সহায়তা ১০ কোটি ডলার অতিক্রম করেনি। এই সময়ে প্রায় ২০ কোটি ডলারের মতো ঋণ ও অনুদান পাওয়া গেছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক শীতল থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে জাপানের সহায়তাপ্রবাহ বাড়তে থাকে। ২০০৯-২০১০ থেকে ২০০১৩-২০১৪ অর্থবছরে অর্থাৎ এই পাঁচ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ ও অনুদান পাওয়া গেছে।

১০ম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আইন উদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৭০০ টাকা। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম মাসে (১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই) বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থা থেকে এক হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ঋণ ও ৬৭ কোটি টাকা অনুদান নেওয়া হয়েছে।

এক যৌথ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে রেকর্ড ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) সংস্থাটি ৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ছাড় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থছাড়ের পরিমাণ গত চার বছর ধরেই বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণে বলা হলেও গত বছর অর্থছাড়ের বিষয়টি নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

চলতি অর্থবছরে (২০১৪-১৫) নতুন প্রকল্পে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে বিশ্বব্যাংক। নতুন প্রকল্পে প্রাধান্য পাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত।

এ প্রসঙ্গে ত্ত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তাবাবদ যে অর্থ পাওয়া গেছে, তা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলো কিনা সেটিই মূল কথা।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্তু খান বলেছেন, অনেক সময় দাতাগোষ্ঠীর আগ্রহে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সহায়তা নেওয়া হয়। অনেক সময় সরকারের পক্ষ থেকেও সহায়তা চাওয়া হয়। সহায়তা পাওয়া ক্ষেত্রে অনেক সময় শর্তযুক্ত থাকে, আবার কখনো তা শর্তমুক্তও থাকে। বাংলা ট্রিবিউন।