HUDHUDসম্প্রতি দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায় চোখ রাখলে ‘হুদহুদ’ নামক ঘূর্ণিঝড়কে বেশ আতঙ্ক ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। এর আগে আইলা, সিডর কিংবা মহাসেনের কথা শোনা গেছে। এর থেকে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এই নামকরণ। ফ্রি এনসাইক্লোপিডিয়া উইকিপিডিয়া ১৯৪৫ সালের পর থেকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোনগুলোর নামকরণের একটি রেওয়াজের কথা বলছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউইউএমও) আওতায় কাজটি করা হয়। জাতিসংঘের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপের আবহাওয়াবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে এ প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এশিয়ার যে কমিটি বড় ঝড়গুলোর নাম দিয়ে থাকে সে প্যানেলে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও ওমানের প্রতিনিধি রয়েছেন বলে জানা যায়। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এস্কেপের প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে প্রতিটি দেশ ঘূর্ণিঝড় নামকরণে ১০টির মতো নাম জমা দেয়। এস্কেপ সিদ্ধান্ত নেয় এখান থেকেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ হবে। এদিক থেকে ধরতে গেলে এস্কেপের সদস্যরা বঙ্গোপসাগরে ভবিষ্যতে দুর্গতি বয়ে আনতে পারে এমন ঝড়গুলোর আগাম নাম প্রস্তাব করে রাখে।

chardike-ad

ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কেন এমন নামকরণ? বিশেষ করে ঝড় যেহেতু আসবেই তার সম্পর্কে সতর্কতা বৃদ্ধি ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি থাকা উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে আগত ঝড়কে মানুষ চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর সম্পর্কে আগাম সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিতে হয়। তাই কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ামাত্র পূর্বানুমান তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে উপযুক্ত তথ্য সংরক্ষণ ও বোঝানোর সুবিধার্থে আগে থেকেই ঝড়ের নাম ঠিক করে রাখাটা জরুরি। আর যে দেশ থেকে ঝড়ের উত্পত্তি, সে দেশের দেয়া উপযুক্ত ও নির্বাচিত নামেই এর নামকরণ করা হয়। সহজ শব্দে এসব ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হলেও তার বেশির ভাগ নারীদের নামে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে রিটা, ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমি, বিজলী প্রভৃতির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে যাওয়া সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড়টির নামও ‘স্যান্ডি’; যা কিনা নারীর নাম। তবে আগে শুধু নারীদের নামে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হলেও ১৯৮৯ সালে ধারণা পাল্টে পর্যায়ক্রমে নারী ও পুরুষের নাম দেয়া হয়। মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি হওয়ায় একটি ঝড়ের নাম দ্বিতীয়বার ব্যবহারের রেওয়াজ নেই।

ঝড়ের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগে এর নামকরণ হতো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু পরিস্থিতিবিশেষে বিশালাকৃতির নামে দ্রুত ধেয়ে আসা ঝড়-সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে জটিলতা সৃষ্টি হয়। অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের বিচারে ঝড়ের নামকরণ ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা যেমন কঠিন, তেমনি মনে রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন নির্দিষ্ট অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ থেকে সৃষ্টি হওয়া ঝড়ের বিশাল সংখ্যা সংবাদে বারবার বলার থেকে যদি বলা যায় ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ কিংবা মহাসেন বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে, সেটা যেমন সহজ, তেমনি যারা তা শুনবেন তাদের জন্যও মনে রাখা এবং সতর্ক অবস্থান তৈরি করা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। এজন্য এস্কেপ পরপর আঘাত হানার সম্ভাব্য ঝড়গুলোর নাম ঠিক করে রেখেছিল হেলেন, লহর, মাদী, নানাউক, মহাসেন, হুদহুদ, নিলুফার, প্রিয়া, কোমেন, চপলা, মেঘ, ভালি, কায়ন্ত, নাদা, ভরদাহ, সামা, মোরা, অক্ষিসহ আরো অনেক স্থানীয় নাম। ডলফিন তথা আইলা কিংবা জনৈক রাজা মহাসেনের নামে নির্ধারিত ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি এবার ওমানের বিখ্যাত হুদহুদ পাখির নামে কৃত ঝড়টির আগমনবার্তায় দৃষ্টি দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে নামকরণ যা-ই হোক, সতর্কতাটা জরুরি। ওয়েবসাইট।