কখনো কি ভেবে দেখেছেন ফেসবুক, টুইটার, লিংকড-ইন, পিন্টারেস্টের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট কীভাবে চলে? তাদের আয়ের উৎস কী? উত্তর, বিজ্ঞাপন।
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে আমরা যা করি, তার সবকিছুই কিন্তু খতিয়ে দেখা হয়। ফেসবুকের কথাই ধরা যাক, কোথাও ‘লাইক’ দেওয়া মানে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করা। স্ট্যাটাস বা কমেন্টসে অর্থাৎ আমাদের লেখায়ও একই রকমভাবে নিজেদের আগ্রহের বিষয়বস্তু থাকে। আর প্রোফাইলে আমরা তা-ই রাখি, যা আমাদের ভালো লাগে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের ভালো লাগার বিষয়গুলোকে তথ্য বা ডেটাতে পরিণত করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিক্রি করে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে। আর সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখানো হয় আমাদের কাছে, কোনো রকম অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। এভাবে ব্যবহারকারীকে একরকম পণ্যে পরিণত করে চলছে বাণিজ্য।
প্রচলিত এই ধারা ভেঙে ফেলে তৈরি করা হয়েছে ‘এলো (www.ello.co)’ নামের নতুন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট। সাদামাটা নকশার বিজ্ঞাপনমুক্ত এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মানুষের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাকে দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে গুরুত্ব। সাত শিল্পী-প্রোগ্রামার এলোর প্রতিষ্ঠাতা। কিডরোবটের প্রতিষ্ঠাতা পল বাডনিৎজ, গ্রাফিক ডিজাইন প্রতিষ্ঠান বার্জার অ্যান্ড ফোহরের টড বার্জার ও লুসিয়ান ফোহর এবং প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মোড সেটের গেব ভ্যারেলা, জে যেসিন, ম্যাথিউ কিট ও জাস্টিন গিটলিন চলতি বছরের মার্চে নিজেদের কাজ দেখাতে ক্ষুদ্র পরিসরে এল তৈরি করেন। তবে ধীরে ধীরে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। আর এভাবেই সর্বসাধারণের জন্য বিকল্পধারার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক হিসেবে এলর আত্মপ্রকাশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে ওয়েবসাইটটির জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ এতে নিবন্ধন করেন। তবে যে কেউ চাইলেই এলোতে যোগ দিতে পারছেন না। বেটা সংস্করণ হওয়ায় নিবন্ধন করার জন্য এলতে নিবন্ধিত কোনো সদস্যের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেতে হবে। তবে পরিচিত এমন কেউ না থাকলে নিবন্ধনের আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে অনুরোধ জানিয়ে রাখতে পারেন। সুবিধামতো সময়ে ই-মেইলে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
আর দশটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মতো এলোতেও ছবি বা লেখা দেওয়া যায়, কমেন্ট করা যায়, বন্ধু বানানো যায়। অনেকে তো একে টাম্বলার ও টুইটারের সমন্বিত রূপ মনে করেন। টাম্বলারের মতো দীর্ঘ বা ক্ষুদ্র লেখা ও ছবি পোস্ট করা যায় আবার টুইটারের মতো ইউজার আইডি দিয়ে কাউকে ‘@মেনশন’ করা যায়। নতুন তবে কী?
এলোর নকশা একদম সাদাসিধে। ওয়েবসাইটের নকশা না, বরং ব্যবহারকারীর নিজের বিষয় বা কন্টেন্ট যেন প্রাধান্য পায়, তাই এমনটা করা হয়েছে। লাইকের পরিবর্তে ‘লাভ’ বাটন সুবিধা যোগ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কোনো কিছু পরে পড়ার জন্য রেখে দেওয়া যাবে। এলোতে ফ্রেন্ডস ও নয়েজ নামে দুটি ট্যাব থাকছে। ফ্রেন্ডস ট্যাবের পোস্টগুলোর সম্পূর্ণ লেখা একের পর এক দেখালেও নয়েজ ট্যাবের পোস্টগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে দেখাবে, আপনার প্রয়োজনমতো ক্লিক করে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়তে পারবেন। আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো যেন আগে চোখে পড়ে, সে জন্য এমন ব্যবস্থা। ইচ্ছামতো যে কাউকে তাদের না জানিয়েই ফ্রেন্ডস বা নয়েজ তালিকায় রাখতে পারেন। লেখাগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বোল্ড বা ইটালিক, লিংক যোগ করা, এমনকি তালিকা আকারেও প্রকাশের সুযোগ থাকছে।
এলোতে এখনো কাজ চলছে। পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ প্রকাশ করতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। ব্যবহারকারীরা কিছু সমস্যা পাচ্ছেন মাঝে মাঝে। বেটা সংস্করণে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। এ ছাড়া নতুন কী কী সুবিধা যোগ হতে যাচ্ছে, তার একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ওয়েবসাইটটিতে। অডিও-ভিডিও অন্তর্ভুক্তি, মোবাইল অ্যাপস তৈরি, কাউকে ব্লক করাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা যোগ করা হবে শিগগিরই। বিস্তারিত এলর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এেলা কীভাবে চলবে, এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না, এমন গুঞ্জন উঠেছিল। প্রতিষ্ঠাতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলোতে মাঝে মাঝে কিছু ‘অফার’ দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে খুবই নগণ্য ফির বিনিময়ে নিজের প্রোফাইলে কিছু অনন্য সুবিধা যোগ করা যাবে। তবে এগুলো ঐচ্ছিক এবং এলো পরিচালনার খরচ চালানোর জন্যই করা হবে। যে কেউ চাইলে বিনা মূল্যে এলো চালিয়ে যেতে পারবেন। বর্তমান পৃথিবীতে সবকিছুর পেছনে যেখানে পুঁজিবাদ মুখ্য হয়ে উঠেছে, সেখানে এলো কখনো ব্যবহারকারীর তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করবে না বলে প্রতিজ্ঞ। কিন্তু প্রভাবশালী অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান কতটা পাকাপোক্ত করতে পারবে, সময় তা বলে দেবে।