Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘পুরোনো’ সাকিব, ‘নতুন’ জুবায়ের

05b935d0137658421d0e6bc5e4123af6-27তিনাশে পানিয়াঙ্গারার ওই বলটা ছিল সম্ভবত দিনেরই সেরা। হঠাৎ লাফিয়ে উঠে মুখের দিকে আসা বলটা ঠেকাতে ব্যাট উঁচু করে ধরেছিলেন তামিম ইকবাল। মুখ বাঁচালেও আউট থেকে বাঁচতে পারলেন না। গ্লাভসে লেগে বল জমা পড়ল স্লিপ ফিল্ডার হ্যামিল্টন মাসাকাদজার হাতে।

ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ দল ওই একটা কারণেই আফসোস করতে পারে। জিম্বাবুয়েকে ২৪০ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর দিন শেষে ১ উইকেটে ২৭ রানের চেয়ে বিনা উইকেটে ২৭-ই তো দেখতে ভালো লাগত বেশি!

chardike-ad

অবশ্য তামিমকে হারানোর আফসোস বাংলাদেশ দল করছে বলে মনে হয় না। যে কারণে তামিম ওভাবে আউট, চা-বিরতির পর আর ১৬ ওভারেই জিম্বাবুয়েকে গুটিয়ে দেওয়াতেও যে সে কারণটাই বড় প্রভাবক! দিনের শুরু থেকেই বল লাফিয়ে উঠছিল। তাতে উইকেটের যে রকম ভূমিকা আছে, লাল এসজি টেস্ট বলের ভূমিকাও হয়তো আছে। এই বলে বাউন্স হয় বেশি, অপেক্ষাকৃত উঁচু সিমে পড়লে তো কথাই নেই। বাউন্স শুধু পেসারদের কাজে লাগে না, সেটি স্পিনারদেরও বিশেষ প্রিয়। সেটির প্রমাণ জিম্বাবুয়ের ১০ উইকেটের ৯টিই স্পিনারদের।

দিন শেষে সাকিব আল হাসানও বলেছেন, ‘দেশের মাটিতে খেলা টেস্টে এর আগে এত বাউন্স দেখিনি। অন্তত ধারাবাহিকভাবে অত বাউন্স করেনি। কিছু বল যেভাবে লাফিয়ে উঠেছে, ও রকম কখনো হয়নি।’

লেগ স্পিনের রোমাঞ্চ জাগিয়ে মাঠে নামা জুবায়ের হোসেন অভিষেকেই নজর কেড়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে নবম বলেই ফিরিয়েছেন ব্রেন্ডন টেলরকে। পরে জিম্বাবুয়ে ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার সিকান্দার রাজাকেও। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ইনিংসে ৫৮ রানে ২ উইকেট, মাত্র দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে জুবায়েরের আকস্মিক উত্থানেরই যেন প্রতীক এই বোলিং।

দিন শেষে এই তরুণের হাসিটা আরও বিস্তৃত হতে পারত রেজিস চাকাভা ও তাফাদজাওয়া কামুনগোজির দেওয়া আউটের সুযোগগুলো সাকিব আর আল-আমিনের হাত ফসকে না গেলে। সাকিবের সুযোগটা অবশ্য বেশ কঠিন ছিল। মিড অন থেকে অনেকটা দূর দৌড়ে গিয়ে ডাইভ দিয়েও চাকাভার স্লগ সুইপে আকাশে উঠে যাওয়া বলটা ধরতে পারেননি। ডিপ মিড উইকেটে আল আমিনের ক্যাচ ফেলার ব্যাখ্যা পাওয়া যদিও কঠিন।

তার পরও অভিষিক্ত বোলার হিসেবে যতটা আলো কাড়ার, ‘নতুন’ জুবায়ের তা কেড়েছেন। তবে বিসিবির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ‘প্রত্যাবর্তন’ টেস্টে আলোটা নেচে বেড়াল ‘পুরোনো’ সাকিবকে ঘিরেই। ৫৯ রানে ৬ উইকেট, ক্যারিয়ারে ১২তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এখন শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই সাকিবের যা করতে বাকি। সে জন্য তো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে হবে!

ইনিংসের অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম দুই ওভারই নিলেন মেডেন। তাতে কিছুটা অধৈর্য হয়ে উঠে থাকবেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। সাকিবের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই চড়াও হতে গেলেন। পরিণতি-মিড অফে জুবায়েরের ক্যাচ। এরপর যত সময় গেছে, সাকিবের বল ততই হয়ে উঠেছে ‘প্রাণঘাতী’। মাত্র ৪০ রানের মধ্যে জিম্বাবুয়ের শেষ ৪টি উইকেট পড়েছে, ৪টিই নিয়েছেন সাকিব। এসজি বল আর পিচের আচরণ তো কারণ বটেই, ব্যাটসম্যানদের জন্য সাকিবের বল দুরূহ হয়ে উঠছিল তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেও। বিতর্কের পাহাড় ডিঙিয়ে মাঠে নামা সাকিবের বল যেন তিনি যা বললেন তা-ই শুনল। আর তাতে ২ উইকেটে ৭৭ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়া জিম্বাবুয়ে অলআউট চা-বিরতির ঘণ্টা খানেক পরই।

সপ্রতিভ ছিলেন আসলে বাংলাদেশের সব বোলারই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অভিষেকের পর ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা তাইজুল ইসলামকে খেলাও খুব সহজ ছিল না তাদের জন্য। আর প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নামা শাহাদাত শুরুতেই পেয়ে গেলেন উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারেই দারুণ এক ইন সুইংয়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়েছেন ওপেনার ভুসি সিবান্দাকে। বোলারদের এমন সম্মিলিত আক্রমণকে দিন শেষে সাকিব অভিহিত করেছেন দলীয় প্রচেষ্টা হিসেবে, ‘তিন-চারজন উইকেট নেওয়ার মতো বোলার থাকলে পুরো দলের জন্যই ভালো। আমি অন্যদের তুলনায় বেশি উইকেট পেলেও এটা ছিল দলীয় প্রচেষ্টার ফসল।’

সব মিলিয়ে প্রথম দিনটা বাংলাদেশেরই। সাকিবের ধারণা সত্যি প্রমাণ করে প্রথম ইনিংসে ৩৫০-৪০০ রান করতে পারলে হয়তো টেস্টটাও বাংলাদেশের হয়ে যাবে। তবে সেটার জন্য মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে আকাশের দিকেও। কাল সন্ধ্যার বৃষ্টির পর আবহাওয়ার পূর্বাভাস যে বলছে, ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে আজও!

প্রথম দিনের শেষে
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৪০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৭/১