Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রথম গ্রামীণফোন দ্বিতীয় ইসলামী ব্যাংক

tax payerগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৩-১৪ করবর্ষেও সর্বোচ্চ করদাতা হয়েছে গ্রামীণফোন। তবে সংখ্যার বিচারে শীর্ষ করদাতাদের তালিকায় প্রাধান্য রয়েছে ব্যাংকিং খাতের। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানও এ খাতের। ২০১৩-১৪ করবর্ষের আয়কর বিবরণী অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ কর দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ)।

২০১৩-১৪ করবর্ষের আয়কর বিবরণীর ভিত্তিতে সর্বোচ্চ করদাতা ২৫ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তালিকায় ২১টি কোম্পানিই ব্যাংকিং খাতের। বাকি চারটি ব্যাংকবহির্ভূত কোম্পানি।

chardike-ad

দেশের বড় করপোরেট করদাতারা এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) আওতায় কর পরিশোধ করে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি এলটিইউতে আয়কর বিবরণী জমা দেয় তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আয়কর বিবরণী অনুযায়ী এসব করদাতারই একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও প্রতি বছর সর্বোচ্চ করদাতাদের যে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়, সেখানে এসব করপোরেটের নাম থাকে না। এ সুযোগ পায় ছোট করদাতারা।

২০১৩-১৪ করবর্ষের আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কর দিয়েছে সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনই সর্বোচ্চ কর দিয়ে আসছে।

গ্রামীণফোন লিমিটেডের হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৩-১৪ করবর্ষেও দেশের শীর্ষ করদাতা হতে পেরে গ্রামীণফোন গর্বিত। স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশীদারিত্বের এটি একটি বড় স্বীকৃতি বলে মনে করি আমরা।’

সর্বোচ্চ করদাতার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড কর পরিশোধ করেছে ৫১০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। নতুন সেবার পাশাপাশি শাখাও বাড়ছে। এতে মুনাফাও ভালো হয়েছে, বড় অঙ্কের করও পরিশোধ করতে হয়েছে।’

শীর্ষ করদাতাদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ)। বিদেশী ব্যাংকটি আলোচ্য সময়ে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ৫০৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর পর ৪১৬ কোটি টাকা কর পরিশোধ করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আরেক বিদেশী ব্যাংক এইচএসবিসি। আর পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। তারা পরিশোধ করেছে ৩২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

সর্বোচ্চ করদাতাদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। এ সময় তারা কর পরিশোধ করেছে ২৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড। আলোচ্য সময়ে বহুজাতিক কোম্পানিটি কর দিয়েছে ২৭৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

অষ্টম থেকে ১৮তম স্থান পর্যন্ত তালিকার সব প্রতিষ্ঠানই ব্যাংকিং খাতের। ২৪৪ কোটি ১১ লাখ টাকা কর দিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে পূবালী ব্যাংক। এছাড়া ২৩১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা কর দিয়ে প্রাইম ব্যাংক নবম, ২২৫ কোটি টাকা দিয়ে ইস্টার্ন ব্যাংক দশম, ২১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১১তম, ২০৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়ে সাউথইস্ট ১২তম, ১৮৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা দিয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৩তম, ১৮০ কোটি ১৮ লাখ টাকা দিয়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১৪তম, ১৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা দিয়ে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১৫তম, ১৫৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ব্যাংক এশিয়া ১৬তম, ১৫৩ কোটি টাকা দিয়ে এক্সিম ব্যাংক ১৭তম ও ১৫২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কর দিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক রয়েছে তালিকার ১৮তম স্থানে।

শীর্ষ করদাতাদের তালিকায় ব্যাংকিং খাতের আধিপত্যের বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং খাতে হিসাব ব্যবস্থা উন্নত মানের। তাছাড়া এ খাতে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি। তাই সেখানে কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কম। এ কারণে ব্যাংকিং খাত থেকে কর বেশি আসে।

তিনি বলেন, ব্যাংকবহির্ভূত খাতে হিসাব ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। তাছাড়া এনবিআর তেমন নজরদারি করতে পারে না। নজরদারি করার মতো সক্ষমতাও তাদের নেই। এ কারণে বড় প্রতিষ্ঠান শীর্ষ তালিকার বাইরে থাকে।

তবে এনবিআর আগের তুলনায় অনেক বেশি করবান্ধব বলে জানান এনবিআরের সদস্য বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, বড় করদাতাদের জন্য এলটিইউ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে তারা আগের চেয়ে বেশি কর দিতে উত্সাহিত হচ্ছেন। এছাড়া নতুন করেও অনেকে এলটিইউভুক্ত হচ্ছেন।

সর্বোচ্চ করদাতার তালিকায় ১৯তম স্থানটি আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের। বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠান আলোচ্য সময়ে সরকারকে কর দিয়েছে ১৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। তালিকার ২০ থেকে ২৫তম অবস্থানেও রয়েছে ব্যাংকিং খাতের ছয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দিয়ে ২০তম, সোনালী ব্যাংক ১৪৬ কোটি টাকা দিয়ে ২১তম ও অগ্রণী ব্যাংক ১৪৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কর পরিশোধ করে ২২তম স্থানে রয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক আরাস্তু খান বলেন, ব্যাংকটি কর পরিশোধের বিষয়ে সবসময়ই সচেষ্ট। রাষ্ট্রীয় পাওনা যথাসময়ে পরিশোধের চেষ্টা করা হয়। এজন্য দেশের শীর্ষ করপোরেট করদাতাদের তালিকায় উঠে এসেছে ব্যাংকটি।

এছাড়া যমুনা ব্যাংক ১৩৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিয়ে ২৩তম, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১৩৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা দিয়ে ২৪তম ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ১৩০ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ২৫তম অবস্থানে রয়েছে। বণিকবার্তা।