Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্ব কৃষি ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে ভাসমান সবজি চাষ

জাতিfao agriসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এএফও) কর্তৃক ‘কৃষি ঐতিহ্য অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি  পেতে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাসমান পদ্ধতির সবজি চাষ। এরই মধ্যে এ পদ্ধতিতে সবজি আবাদকে সম্ভাবনাময় গ্লোবালি ইমপোর্টেন্ট এগ্রিকালচারাল হেরিটেজ সিস্টেম (জিআইএএইচএস) সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সংস্থাটি। এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি আবাদকে ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে এফএও। বাংলাদেশের ছয়টি কৃষি পদ্ধতি সম্ভাবনাময় জিআইএএইচএস সাইট হিসেবে সংস্থাটির স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি আবাদকে চূড়ান্ত স্বীকৃতির বিষয়ে গত ২৮ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে এফএও প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়। সে আলোচনায় চূড়ান্ত স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করে এফএও প্রতিনিধিরা। তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি আবেদনের অনুমোদন দিয়েছে। কৃষিমন্ত্রীও সে আবেদনে অনুমোদন দিয়েছেন। আবেদনটি এখন এফএও কার্যালয়ে নিয়ম মেনে পাঠানো হবে।

chardike-ad

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভাসমান সবজি আবাদকে দেশের প্রথম কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এফএওর নীতিমালা এবং নিয়ম মেনেই এ আবেদন করা হয়েছে। চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

এফএও সূত্রে জানা গেছে, এফএওর জিআইএএইচএস সম্ভাবনাময় সাইটের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও ৩৬টি দেশের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ ছয়টি সাইটের মধ্যে ভাসমান সবজি আবাদকে প্রথম কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে আদায়ের চেষ্টা করছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩১টি বিশ্ব কৃষি ঐতিহ্য সাইট আছে, যার ১৩টিই রয়েছে চীনে। এছাড়া জাপানে পাঁচটি, ভারতে তিনটি, তানজানিয়া ও কোরিয়ায় দুটি করে সাইট রয়েছে। অন্যদিকে আলজেরিয়া, চিলি, ইরান, কেনিয়া, মরক্কো, পেরু, ফিলিপাইন ও তিউনিসিয়ায় একটি করে কৃষি ঐতিহ্য সাইট আছে।

কৃষি জমির বিকল্প হিসেবে জলাশয়ে চাষের এ পদ্ধতি কয়েক দশক ধরেই দেশের গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর ও বরিশালে সাফল্যের সঙ্গে চলে আসছে। ভাসমান এ পদ্ধতিতে কৃষির উৎপাদনশীলতা কৃষিজমির মাটির তুলনায় ১০ গুণ বেশি। এছাড়া সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন হওয়ায় কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না এতে। ফলে উৎপাদন খরচও কমে অর্ধেকে নেমে আসে। দেশের এ প্রযুক্তি নিয়ে জাপান ও থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে গবেষণা চলছে। এর মাধ্যমে চাষের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে তারা।

দেশে ভাসমান সবজি আবাদ সম্প্রসারণের জন্য কাপ্তাই হ্রদকে বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় যেখানে জলাবদ্ধতা কিংবা পর্যাপ্ত পানি আছে, সেখানে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে চাষ। পিরোজপুর, বরিশালের অন্যান্য এলাকা, সুনামগঞ্জের হাওর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাদারীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ ও সুনামগঞ্জকেও চাষের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন শাকসবজি যেমন— লালশাক, পুঁইশাক, শসা, বরবটি, ঢেঁড়শ, মিষ্টিকুমড়া ও ঝিঙা উৎপাদন করা হয়। এছাড়া এ প্রক্রিয়ায় আদা, মরিচ, টমেটো এবং হলুদ চাষ ব্যাপকভাবে করার নতুন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন ফসল চাষও এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিটি কৃষকদের উদ্ভাবনী শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এটি বর্ষাকালে সবজির চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি পেলে আবাদকে আরো গতিশীল করা সম্ভব হবে। আর এ ধরনের আবাদকে টিকিয়ে রাখতে বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া দরকার।

আবাদ পদ্ধতি বিষয়ে কৃষকরা জানান, বর্ষার শুরুতে বিল বা হাওর এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কচুরিপানা, শেওলা এবং লতাপাতা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাপ বা মাচা। পর্যায়ক্রমে এ ধাপ বা মাচা দু-তিন ফুট উঁচু করা হয়। কচুরিপানাগুলো দ্রুত পচাতে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া সার। তার ওপর হালকা মাটি। সারিবদ্ধ করতে দুই পাশে ব্যবহার করা হয় বাঁশ। সাধারণত এ মাচা প্রস্থে পাঁচ থেকে আট ফুট হলেও পানির প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রস্থ নির্ভর করে। বণিকবার্তা।