Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আফগানিস্তানে গুলির শব্দ থামাতে চান ক্রিকেটাররা

afg-cricketঅস্ট্রেলীয় সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ মানুকা ওভালের ঘাসের উপর দিয়ে যখন হেঁটে যাবেন মহম্মদ নবি, রিফিউজি ক্যাম্পের দিনগুলোর কথা মনে পড়বে কি না কে জানে! বিস্মিত হবেন? অসম্ভব নয়। কোথায় কাঠের টুকরো আর পাথর দিয়ে আফগান প্রদেশে ক্রিকেটপাঠ, আর কোথায় মানুকা ওভালের সবুজ গালিচা, ইংলিশ উইলোর পৃথিবী।
কাবুলিওয়ালার দেশে তাদের কোচ কোচিং করাতে ঢুকেই শুনেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যোগ্যতাঅর্জনের আনন্দটা কী রকম ছিল। অ্যান্ডি মোলস আফগানিস্তানে কোচিং করাবেন শুনে তার পরিবার খুব গদগদ হয়েছিল, ভাবার কারণ নেই। মোলসের নিজের ভাই স্বয়ং চরমপন্থীবিরোধী কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত, আর ভাইয়ের ঠিকানা সেখানে সোজা তালিবান অধ্যুষিত আফগান প্রদেশ। পরিবারের শাসানি সমেত যখন ও দেশে ঢুকলেন মোলস, শুনলেন কয়েক দিন আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার আনন্দটা রাজসিকভাবেই হয়েছিল। আকাশে একে ৪৭ চালিয়ে! গুলি তাদের দেশে মঙ্গলবারও চলেছে। সুইসাইড বম্বাররা পুলিশ স্টেশনে ঢুকে কেড়েছে গোটা কুড়ি প্রাণ। তবু মোহম্মদ নবি, নওরোজ মঙ্গল, শাপুর জাদরানের মনে হয় যদি মানুকা ওভালে বুধবার সৃষ্টি হয় ইতিহাস, তা হলে গুলির শব্দ থেমে যাবে আবার। আফগানিস্তানের ভিন্ন প্রদেশের ভিন্ন ভাবধারার মানুষকে নাকি সম্মোহিত করে ফেলা যাবে ক্রিকেট-বন্ধনীতে। আবার তারা নামবেন কাবুল-পেশোয়ারের রাস্তায়, আবার শূন্যে ছোড়া হবে আনন্দের কার্তুজ। বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে হারানো গিয়েছিল যখন, বিশ্বকাপেই বা সম্ভব হবে না কেন?
“এমন একটা ম্যাচে নামছি, যা আমাদের দেশে শান্তি ফেরাতে পারে। স্থিরতা ফেরাতে পারে,” বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলে দিয়েছেন আফগান অধিনায়ক নবি। যারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামার সুখ পেলেও এত দিন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অধরা শৃঙ্গ ছিল। নবি জানেন, যদি ম্যাচটা জিততে পারেন লোককে যুদ্ধবিগ্রহের বাইরে আফগানিস্তান নিয়ে ভাল কিছু বলার সুযোগ দিতে পারবেন। জানেন, যুদ্ধে জর্জরিত দেশজ জনতার মনন পাল্টাবে তখন। “আর আমাদের উপর চাপ কী? চাপ তো বাংলাদেশের উপর,” সহাস্যে প্রাক-ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে বলে দেন নবি। বোধহয় ঠিকই। যে দেশে এখনও বিদ্যুৎ-জল ঢোকেনি পর্যাপ্ত, সে দেশের ক্রিকেটারের কাছে বিশ্বকাপের একটা ম্যাচ আর কতটা চাপ। কতটা স্নায়ুর চাপে ভুগতে পারে সে দেশের ক্রিকেটার যাদের কাউকে কাউকে প্র্যাকটিসে আসতে হয় ভাইয়ের শবদেহের অন্তিম সংস্কার করে!
কোচ অ্যান্ডি মোলস মনে করতে পারেন এখনও। আফগান দেশে গিয়ে প্রাণ বাঁচানোর গোটা কয়েক রেডিমেড ম্যানুয়াল বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। মাঠ থেকে হোটেল, হোটেল থেকে মাঠ। রুমের দরজা সব সময় বন্ধ। কেউ তো জানে না কখন সুইসাইড বম্বার এসে হাজির হবে! তবুও আতঙ্কিত হয়েছেন মাঝেমধ্যে। বলেছেন, “আফগানিস্তানকে কোচিং করানোটা পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ।” প্র্যাকটিসে এক ক্রিকেটারকে কেন দেরিতে এলে জিজ্ঞেস করায় যখন শুনেছেন, “ভাইকে মেরে ফেলেছে ওরা। দাফন করে আসছি।” বা যখন শুনেছেন অন্য ক্রিকেটারদের কারো পরিবারকেই তুলে নিয়েছে চরমপন্থীরা!
আর এখানেই বোধহয় দুই ‘ক্রিকেট-বামনের’ যুদ্ধ থেকে সরে প্রেÿাপটটা আরও বৃহৎ হয়। রোম্যান্স তৈরি হয় আপনাআপনি। এক দিকে আদ্যন্ত বাঙালি টিম। সাকিব-আল হাসানদের। অন্য দিকের টিমটা চার দশক ধরে শুধু পড়ে পড়ে মার খেয়ে এখন মাথা তুলছে। পনেরো বছর ধরে তো ক্রিকেট খেলছে দেশটা। একটা সময় দেশে একটা মাত্র সিমেন্টের পিচ ছিল। সেই অবস্থা থেকে একটা নবি, একটা জাদরান, একটা হামিদ হাসানকে চিনেছে বিশ্ব।
কাবুলিওয়ালার দেশে এক সময় কোচিং করানো অস্ট্রেলীয় জিওফ লসন তাই নিশ্চিত। তার মন বলছে, বুধবারও বাংলাদেশ বধ হলে পুরো আফগানিস্তান রাস্তায় নাচবে। নাচবেই!