Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৫ টাকায় পানি পার

water

চৈত্রের শেষের আমেজ দিতে গত রোববার ভোররাতে রাজধানীর বুকে নামে মুষলধারে বৃষ্টি। তবে ভোর হতে নগরবাসী বৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার চেয়ে রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখতেই তৎপর হয় বেশি। আশেপাশে অলি-গলি নয় শুধু, অনেক বড় রাস্তাও ডুবে যায় বৃষ্টির পানিতে। নিম্নগামী বৃষ্টির পানির মতোই মানুষেরও জনদুর্ভোগ নিম্নগামী হতে শুরু করে বেলা বাড়ার সঙ্গে। প্রিয় রাজধানী ঢাকার মালিবাগ থেকে শান্তিনগর মোড়ের রাস্তা আর ফুটপাত দুটোই ডুবে ছিল ওই হাঁটু পানিতে। ফলে পথচারি ও পেশাজীবী মানুষকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। পায়ের জুতা হাতে তুলে প্যান্ট হাঁটু সমান গুটিয়ে অতি সর্তকভাবে ম্যানহোল বাঁচিয়ে পানি পার হচ্ছেন পথচারীরা।

chardike-ad

জরাজীর্ণ রাস্তায় ময়লাযুক্ত এই পানি মাড়িয়ে হাঁটতে চান না অনেকেই। তাই তাদের জন্য ছিল বিকল্প ব্যবস্থা। ইচ্ছে করলে যে কেউ পানি পার হতে পারেন ভ্যান অথবা রিক্সায়। প্রতিমোড় পানি পার জনপ্রতি মাত্র ৫টাকা। ব্যাতিক্রম ও আছে। কেউ চাইলে একটু আরামে-আয়েসে পানি পার হতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতিরিক্সায় রিক্সায় একজন করে মাত্র ১০ টাকায়।

সকাল ১০ টা থেকে মালিবাগ মোড়ে পানি পার করছিলেন ভ্যানচালক মো. আল আমিন। কথার এক পর্যায়ে আল আমিনের কাছ থেকে জানা যায়, সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১০টা এই ৩০ মিনিট পানি পার করে এখন পর্যন্ত তিনি আয় করেছেন প্রায় পাঁচ শাতধিক টাকা। তবে আরো সকাল থেকে পানি পার করতে পারলে আয় অনেকটা বেশি হতো বলেও জানালেন তিনি।

অন্য আরেকজন রিকশাচালক মো. সদু মিয়া। পানি পার করছেন শান্তিনগর মোড়। ১০ হাত পরিমান জায়গা। দুইজন অথবা একজন। প্রতি রিক্সা পানি পার ১০টাকা। জানতে চাইলে  মো.সদু মিয়া বলেন, এক ঘন্টা হলো পানি পার করছি। এখন পযর্ন্ত আয় হয়েছে ২৫০ টাকার কিছু বেশী।

তবে যারা টাকা খরচ করে অথবা পায়ে হেঁটে পানি পার ইচ্ছুক নয় তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে আপনজন অথবা বন্ধু-বান্ধবের কাঁধে চড়েও পানি পার হতে দেখা গেছে।

রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়া যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য এলাকায় পানি সরে গেলেও মৌচাক –মালিবাগ-শান্তিনগর এই এলাকার পানি যেন কিছুতেই সরে না। এজন্য এলাকার বাসিন্দারা ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন। তারা বলেন, বহু বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও কোন সরকারই ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না।

মালিবাগের বাসিন্দা পল্টন সিএ ফার্মের স্টাফ মো. আলী অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, কোন সরকারই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই এটা আমাদের সহ্য হয়ে গেছে। এখন আর কিছু মনে করি না। এ সমস্যা সমাধান করতে চাইলে রাজধানীর জনসংখ্যা কমাতে হবে। জনসংখ্যার চাপে যেখানে সেখানে আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

খানাখন্দে ভরা রাজধানীর এ এলাকাটিতে চলতে এমনিতেই অনেক বিপদ। তার উপর একবার পানি জমলে নামতে লাগে কয়েকদিন। দুর্গন্ধে এখান দিয়ে হাটঁতে গেলে নাক চেপে রাখতে হয়। সঙ্গে আছে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের ময়লা। আর তার সঙ্গে বৃষ্টি হলে যোগ হয় ড্রেন-সুয়্যারেজের ময়লা। এ অবস্থায় শুধু অফিসগামী মানুষ নয়, স্কুলগামী কোমলমতি ছেলেমেয়েদের নিয়েও সব সময়ই আতঙ্কে ভোগেন এখানকার অভিভাবকেরা।