Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা

grameen-sportsগোল্লাছুট, বৌছি, কানামাছি, হা-ডু-ডু, দাড়িয়া বান্ধা, কুত-কুত, সাতচারা, ডাংগুলি, এক্কা-দোক্কা এসব খেলার নাম শোনেন নি কিংবা ছোটবেলায় খেলেন নি-এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে।

এগুলো হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও অসংখ্য খেলা। তবে সময়ের পালাবদলে দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রিড়া সংস্কৃতিতে এখন বিলুপ্তির পথে এই খেলাগুলো। গ্রামে-গঞ্জে ছুটে বেরিয়েও চোখে পড়ে না এসব খেলা। যেন যাদুঘরেই চলে গেছে বাংলার এই ক্রিড়া সংস্কৃতি!

chardike-ad

কিছু কিছু ‍অঞ্চলে অবশ্য মাঝে মধ্যে আয়োজন করা হয় কিছু গ্রামীণ খেলার। এগুলোর মধ্যে হা-ডু-ডু, জব্বারের বলি খেলা, নৌকা বাইচ ইত্যাদি। বর্ষার মৌসুমে ঘটা করেই আয়োজন হয় নৌকাবাইচ। স্থানীয় জনগণ আয়োজন করেন এসব খেলা। তবে পৃষ্ঠপোষক না থাকায় সেই আয়োজনও কমে এসেছে।

গ্রামীণ খেলাধুলার আলাদা কোনো ফেডারশেন না থাকায় একত্রিত হতে পারছেন না তারা। দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে ফেডারেশনের কোনো বিকল্প নেই।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ফাঁকা জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়া, স্মার্টফোনে ভিডিও গেমসের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারণেই  গ্রামীণ খেলাধুলার এমন বেহাল অবস্থা হচ্ছে বলে মনে করেন ক্রিড়া সংশ্লিষ্টরা।

গ্রামীণ খেলাধুলা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে এমন শিশু-কিশোরের খোঁজ এখন আর মেলে না। তাদের অনেকেই এসব খেলাধুলার গল্প শুনেছেন তার বাবা-মা, দাদা-দাদীর কাছে। গ্রামীণ খেলাধুলা যেন তাদের কাছে হারানো ঐতিহ্য!

অথচ বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলার ‌উপকারিতা জানলে অবাক না হবার উপায় নেই! গোল্লাছুট, বৌছি, কানামাছি, হা-ডু-ডু, দাড়িয়া বান্ধা, কুত-কুত, সাতচারা, মার্বেল, ডাংগুলি, এক্কা-দোক্কাসহ এমন ৪০টি গ্রামীণ খেলার উপর ২০১৩ সালে গবেষণা করে ইংল্যান্ডের একটি বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান। গবেষণার রিপোর্টে বেরিয়ে আসে এসব খেলাধুলার উপকারি নানান দিক। শিশু-কিশোরদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ সাধনে এসব খেলার বিকল্প কিছু খুঁজে পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

এ তথ্য জানতে পেরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি ক্রিড়াপ্রেমী সেরাজুল ইসলাম ফিরে গেলেন তার শৈশবে। দাড়িয়া বান্ধা খেলার সময় সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে সবদিকেই তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হতো। খেয়াল রাখতে হতো চারপাশে এমনকি প্রতিপক্ষ টিমের খেলোয়াড় পেছনের দিক থেকে কেউ ডিঙ্গিয়ে যাচ্ছে কি-না।

এক সময় তার মনে প্রশ্ন আসতো-এসব খেলার উপকারিতা আসলে কি? কৈশরের জবাব মধ্য বয়সে এসে পেয়েছেন সিরাজ সাহেব। তিনি জানান, ‘চোখ দিয়ে পুরো জায়গা নজরে রাখতে হতো। তখন অবচেতন মনেই প্রশ্ন আসতো কি উপকার এই খেলাটির? ‘এখন আমি যখন মোটরবাইক চালাই তখন কেন যেন আপনা-আপানি নজর বিভিন্নদিকে চলে যায়। ফলে বাইক ‍চালানোর সময় বাড়তি সতর্কতা এনে দেয় ছোটবেলার এই অভ্যাসটি।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ুয়া যুবক সোবহান শেখ জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা, ‘ছোটবেলায় প্রচুর খেলতাম। গ্রামে খেলার তো ‍আর অভাব নেই। বৃষ্টিতে ভিজেও অনেক খেলেছি। এখন বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর-সর্দি হয়না। সারাদিন ভিজলেও হয়তো হবে না!’

ছোটবেলা অতিরিক্ত খেলাধুলার কারণে শারিরীকভা‍বে যেমন সুফল দেয়। মানসিক বিকাশও হয় পরিপূর্ণরুপে। সুস্থ দেহের সঙ্গে সুস্থ মানসিকাতাও গড়ে ওঠে তখন।

রাজধানীর মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা মোজাম্মেল ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রতিটি অভিভাবকের দায়িত্ব ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখা। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার বিকল্প কিছু নেই। খেলাধুলা চর্চার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সুস্থ মনন গড়ে ওঠে।’ (বাংলানিউজ)