Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইসলামী ব্যাংকে শতাধিক কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ

Islami-Bankচাকরির বয়স ২৫ বছর অতিক্রম করেছে, এমন শতাধিক কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে এসব কর্মকর্তার কাছে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন পদত্যাগপত্র জমাও দিয়েছেন।

বণিক বার্তার পক্ষ থেকে অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ইসলামী ব্যাংকের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ব্যাংকটির অডিট বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তা, লোকাল শাখার তিন কর্মকর্তা, গাজীপুর শাখার এক কর্মকর্তা, কিশোরগঞ্জ শাখার এক কর্মকর্তা ও ব্যাংকটির ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা রয়েছেন।

chardike-ad

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) মুহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ‘ব্যাংকটিতে এভাবে কর্মকর্তা ছাঁটাইয়ের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে, এমন কর্মকর্তাদের তালিকা করা হয়; যাতে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার নাম আসে। তবে প্রথম ধাপে শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকদের কাছে ফোনে এসব কর্মকর্তাকে পদত্যাগের নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। অন্যথায় ব্যাংক চাকরিচ্যুত করলে কোনো সুবিধা পাবেন না।

ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের নভেম্বরে। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, চাকরির বয়স ২৫ বছর পার হয়েছে।

ব্যাংকটির গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক ওয়াহিদুজ্জামান আকন বলেন, ‘প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তার শাখার এক কর্মকর্তা এরই মধ্যে তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এক-দুদিনের মধ্যে পদত্যাগপত্রটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব।’

ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ জানান, তার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে নয় বছর পর। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন এ নির্দেশনা, তার কারণ জানানো হয়নি।

এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এ শাখার এক কর্মকর্তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

ইসলামী ব্যাংকের ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো এভাবে কর্মকর্তা ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। এতে ব্যাংকের সব কর্মীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ইসলামী ব্যাংকের পর্যবেক্ষক ইস্কান্দার মিয়া বলেন, ‘এভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে ১৩ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। ২০১৪ সালে ব্যাংকটি বেতন-ভাতা বাবদ ৮১০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। ২০১৩ সালে পরিশোধ করেছিল ৭১৩ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরপূর্বক স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা, বরখাস্ত বা অপসারণ এবং এর পরবর্তীতে দায়দেনা প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগ উঠছে।

গত এপ্রিলে ব্যাংকার্স সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি ও তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয় বলে

মন্তব্য করেন। এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তা প্রমানিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।(বণিক বার্তা)