Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অভিশপ্ত হীরা (দ্বিতীয় পর্ব)

diamondহীরা! কেউ নিজের আভিজাত্য প্রকাশ করতে, কেউবা প্রেমিকার মন ভজাতে আবার কেউবা জোতিষ্যির পরামর্শে ভাগ্য সুরক্ষায় মহামূল্যবান এই রত্ম ব্যবহার করে থাকেন। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ভাগ্য সুরক্ষার পরিবর্তে রীতিমতো অভিশাপ হয়েই দেখা দিয়েছে হীরা। সেই সব অভিশপ্ত হীরা নিয়ে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ-

ব্ল্যাক অরলভ : এককালে এটি ব্রহ্মার চোখ নামে পরিচিত ছিল। হোপ ডায়মন্ডের মতো এর আদিভূমিও ভারত। ১৮০০ সালের দিকে এই হীরাটির খোঁজ পাওয়া যায়।

chardike-ad

লোককাহিনী অনুযায়ী, ভারতের পন্ডিচেরিতে দেবতা ব্রহ্মার মন্দিরে রক্ষিত ছিল ১৯৫ ক্যারটের ব্ল্যাক অরলভ। মন্দিরের এক পুরোহিত মূর্তি থেকে গোপনে হীরাটি সরিয়ে ফেলে। এরপরই হীরাটি অভিশপ্ত হয়ে যায়। ওই পুরোহিতের কী হয়েছিল তা অবশ্য লোককাহিনীতে পাওয়া যায় না।


অভিশপ্ত হীরা! (প্রথম পর্ব)


ব্ল্যাক অরলভের পরবর্তী যে ইতিহাস জানা যায়, তাতে বলা হয়েছে, হীরাটি ভারত থেকে সরাসরি রাশিয়ায় চলে আসে। রাশিয়ার জার পরিবারের সদস্য প্রিন্সেস প্রিন্সেস লিওনিলা গ্যালিতসিন-বারিয়াতিঙ্কিস্কির মালিকানায় হীরাটি চলে আসে। পরে এটি পান জার পরিবারেরই আরেক সদস্য নাদিয়া ভেইজিন অরলভ। হীরাটির নাম মূলত তার নামের শেষাংশ অনুসারে রাখা হয়েছিল। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের সময় রাশিয়া থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে চলে যান নাদিয়া। ওই সময় হীরাটি তিনি বিক্রি করে দেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে রোমের একটি উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন নাদিয়া। এর পরের মাসেই উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন প্রিন্সেস লিওনিলা গ্যালিতসিন।

ফ্রান্স থেকে পরবর্তীতে হীরাটি হাত ঘুরে চলে আসে আমেরিকায়। জে ডব্লিউ প্যারিস নামে এক হীরা ব্যবসায়ী এটি আমদানি করেন। এর কিছুদিন পরে নিউইয়র্কের সবচেয়ে উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

১৯৪৯ সালের ১৩ মে হীরাটি কিনে নেন নিউইয়র্কের জুয়েলারি ব্যবসায়ী চার্লস এস উইনসন। অভিশাপ খন্ডন করতে তিনি হীরাটি তিন খণ্ড করেন। সেই থেকে এ পর্যন্ত ব্ল্যাক অরলভের মালিকদের কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।

১৯৬৯ সালে ৬৭ দশমিক ৫ ক্যারটের ব্ল্যাক অরলভ তিন লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি করে দেন এস উইনসন। তবে ১৯৯০ সালে এক নিলামে এটি মাত্র ৯৯ হাজারে ডলারে বিক্রি হয়। ১৯৯৫ সালে অবশ্য ব্ল্যাক অরলভ সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হয়। অজ্ঞাতনামা এক ক্রেতা এটি ১৫ লাখ ডলারে কিনে নেন।

কোহিনুর : কোহ্-ই-নূর অর্থ ‘পর্বতের আলো’। লোককাহিনী অনুযায়ী, এটি ছিল দেবতা শ্রী কৃষ্ণের কাছে। তিনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন, তার কাছ থেকে এটি চুরি করা হয়। তবে কোহিনুরের ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় সম্রাট বাবর লিখিত ‘বাবরনামা’তে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কোল্লুড় খনি থেকে হীরাটি উদ্ধার করা হয়। ওই সময় হীরাটির ওজন ছিল ১৮৬ দশমিক ১০ ক্যারট। তবে বর্তমানে এর ওজন ১০৫ দশমিক ৬০ ক্যারট। বারো শতকের দিকে কোহিনুর ছিল মালওয়ার রাজাদের অধিকারে। পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন হাত ঘুরে মোঘল সম্রাট বাবরের হাতে আসে। তখন এর নাম ছিল ‘বাবরের হীরা।’ সম্রাট বাবর এটি তার ছেলে হুমায়ুনকে উপহার হিসেবে দেন। পরবর্তীতে কোহিনুর সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ুর সিংহাসনের শোভাবর্ধন করে।

মোঘলদের দুর্বলতার সুযোগে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ যখন ভারত আক্রমন করেন, তখন কোহিনুর তার হস্তগত হয়। নাদির শাহই ‘বাবুরের হীরার’ নাম পরিবর্তন করে কোহিনুর। ১৭৪৭ সালে নাদির শাহ নিহত হওয়ার পর কোহিনুর আসে তার সাবেক সেনাপতি ও আফগানিস্তানের শাসক আহমেদ শাহ দুররানির হাতে। পরবর্তীতে আহমেদ শাহ দুররানির উত্তরাধিকারি সুজা শাহ দুররানিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে তিনি লাহোরে পালিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিল কোহিনুর। সুজার কাছ থেকে কোহিনূরটি কেড়ে নেন পাঞ্জাবের শাসক মহারাজ রঞ্জিত সিং। রঞ্জিতের মৃত্যুর পর ১৮৪৯ সালে তার ১০ বছর বয়সের ছেলে ও শিখ সম্রাট দিলীপ সিংকে যুদ্ধে পরাজিত করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পরবর্তীতে ভারত থেকে কোহিনুর নিয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডে। সেই থেকে কোহিনুর শোভা পাচ্ছে ব্রিটেনের রানীদের মুকুটে।

এবার আসি কোহিনুর নিয়ে অভিশাপের কথায়। বাবরের আগে কোহিনুর ছিল লোদী বংশের শাসকদের হাতে। সিকান্দার লোদী ও ইব্রাহিম লোদী দুজনই বিশ্বস্ত মানুষদের হাতে খুন হয়েছিলেন। বাবরের মৃত্যু হয়েছিল রোগে ভুগে। হুমায়ূনের মৃত্যু হয়েছিল লাইব্রেরির সিঁড়ি থেকে পা ফসকে গিয়ে। শাহজাহানই কোহিনুর নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাতামাতি করেছিলেন। তার জীবনের শেষ ভাগ কেটেছিল গৃহবন্দী দশায়। যেই নাদির শাহ মোগলদের কাছ থেকে কোহিনুর ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, তিনিও খুন হয়েছিলেন স্বজনদের হাতে। সর্বশেষ যে জাহাজটিতে করে কোহিনুর ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছিল সেটিও বেশ কিছু দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিল। যাত্রাপথে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে জাহাজের সেকেন্ড ইন কমান্ড এফ এম লরেন্সসহ পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছিল।

কোহিনুর এ অভিশাপের কারণ হিসেবে বলা হয়, ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই হীরকখন্ডটি যখনই কোনো পুরুষ ধারণ করেছে, সেই ধ্বংস হয়ে গেছে। কেবল নারীদের বেলায় এটি ব্যতিক্রম। নারীরা বরাবরই এর অভিশাপ থেকে বেঁচে গেছেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের কোনো সদস্যই এই হীরাটি তাদের কাছে রাখেননি। বরাবরই এটি রানীদের দখলে ছিল।(রাইজিংবিডি)