Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়া যেতে ৪৫ হাজার টাকার বেশি লাগবে না

nurulislam২০১৫ সালের ১৪ জুলাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম বিএসসি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। প্রায় ৭৬ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করেন। তাদের দেখভাল এবং নিরাপদ অভিবাসনের দায়িত্ব এ মন্ত্রণালয়ের। দক্ষ জনশক্তি রফতানি ও এ খাতের সার্বিক বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহাম্মদ

সমকাল: জনশক্তি রফতানির কথা উঠলে, প্রথমেই আসে মালয়েশিয়ার কথা। দেশটিতে জনশক্তি রফতানি প্রায় ছয় বছর ঝুলে আছে। জিটুজি, বিটুবির পর জিটুজি প্লাস আলোচনা আছে। কিন্তু জিটুজি প্লাস চুক্তি হবে কবে?

chardike-ad

নুরুল ইসলাম: জিটুজি প্লাস চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সহসাই দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হবে। চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের পর্যায়ে ছিল। মালয়েশিয়ার অনুরোধে চুক্তির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সমকাল: মালয়েশিয়া চুক্তির কোন কোন শর্তে আপত্তি করেছে? দেশটির গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, মালয়েশিয়ান উপপ্রধানমন্ত্রী আপনাকে চিঠি দিয়ে শর্ত দিয়েছেন, তার পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কর্মী বাছাইয়ের কাজ দিতে হবে।

নুরুল ইসলাম: মালয়েশিয়ার কোনো আপত্তি নেই। চুক্তি নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। আমরা সময় নিচ্ছি চুক্তিকে আরও কর্মীবান্ধব করার। বিদেশ গিয়ে সবাই যেন কাজ পায়, তা নিশ্চিত করতে চাইছি। মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আমাকে কেন চিঠি দেবেন? মালয়েশিয়ার পছন্দের প্রতিষ্ঠানই যদি কর্মী বাছাইয়ের কাজ পায়, তাহলে আমাদের রিত্রুক্রটিং এজেন্সিগুলো কী করবে? আমি কোনো সিন্ডিকেটকে কাজ দেব না। যাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই_ তারাই কর্মী পাঠাবে। অন্য কাউকে মধ্যস্বত্ব ভোগের সুযোগ দেব না।

সমকাল: মালয়েশিয়ায় কবে নাগাদ কর্মী যেতে পারবে?

নুরুল ইসলাম: আমরা আশা করছি সহসাই চুক্তি হবে। চুক্তি হলেই কর্মী যাওয়া শুরু হবে। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় ৩০ হাজার কর্মী গিয়েছেন। জনশক্তি রফতানি বন্ধ নেই। চুক্তি হলে বড় পরিসরে যাবে।

সমকাল: ২০১২ সালে প্রায় ১৫ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া যেতে নিবন্ধন করেছিলেন। তখন বলা হয়েছিল কর্মীপ্রতি ব্যয় হবে ৩৩ হাজার টাকা। নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে, নাকি তারাই যাবে?

নুরুল ইসলাম: যাদের নাম নিবন্ধন করা আছে, তারা যাবেন। নতুন করেও নিবন্ধন করা যাবে। সব মিলিয়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হবে না। শুধু বনায়ন বা কৃষি নয়, সব খাতেই কর্মী যাবে। সৌদি আরবেও জনশক্তি রফতানির বাধা ওঠে যাচ্ছে। সেখানেও সব খাতেই কর্মী যাবে।

সমকাল: জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির কথা বলা হলেও, ঘুরে ফিরে ৭-৮টি দেশে কর্মী যাচ্ছেন। নতুন বাজারে বড় পরিসরে জনশক্তি রফতানি হচ্ছে না। এতে কি জনশক্তি রফতানির লক্ষ্য অর্জিত হবে?

নুরুল ইসলাম: থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় নতুন বাজারের সন্ধান চলছে। অস্ট্রেলিয়া দক্ষ কর্মী চায়। কৃষি, প্রকৌশলসহ ১২ খাতে কর্মী নিতে আগ্রহী তারা। কোনো দেশই এখন আর অল্প-দক্ষ কর্মী নিতে রাজি নয়। তাই নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলাকে গূরুত্ব দিচ্ছি। নতুন করে ৪০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। কর্মীরা যে দেশে যাবে, সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি শেখাতে ১ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সমকাল: ২০১৫ সালে জনশক্তি রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি হয়েছে। আপনার ঘোষণা ছিল রফতানি দ্বিগুণ হবে। এ ঘোষণা বাস্তবায়নে কি উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়?

নুরুল ইসলাম: শুধু কর্মীদের বিদেশ পাঠানো নয়, তারা যাতে সেখানে গিয়ে কাজ পায় তা নিশ্চিত করতে চাই আগে। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় আড়াই লাখ কর্মী গিয়েছিল। তাদের অনেকেই কাজ পায়নি। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে। আমি চাই না, বেশি বেশি কর্মী পাঠানোর নামে এ অবস্থা সৃষ্টি করতে। যারা কাজ পাবে, তাদেরই পাঠানো হবে।

সমকাল: প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীরা শ্রম অধিকার পাচ্ছেন না। বিশেষ করে কাতারে এমনটি ঘটছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ভারত অভিযোগ আমলে নিয়ে কাতারে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রেখেছিল। বাংলাদেশি কর্মীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

নুরুল ইসলাম: এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। প্রবাসে কর্মীরা সকল সুযোগ-সুবিধা পান না_ তা সত্য। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না_ তা সত্য নয়। ২৮টি দেশে শ্রম উইং চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীরা সেখানে তাদের অভিযোগ জানাতে পারছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা শতভাগ সফল তা বলব না।

সমকাল: বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন অন্যান্য দেশের কর্মীদের তুলনায় অনেক কম। ভারতের কর্মীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। কর্মীরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ নিয়োগকারী দেশগুলোর কাছ থেকে ভালো বেতন আদায় করতে পারে না।

নুরুল ইসলাম: বাংলাদেশি কর্মীরা পরিশ্রমী। কিন্তু ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার অভাবে ভালো বেতন পাচ্ছেন না। ফিলিপাইনের কর্মীরা ভাষা দক্ষতার কারণেই বেশি আয় করছে। তাই আমরা ভাষার ওপর জোর দিচ্ছি। ভাষা শিখিয়ে বিদেশ পাঠানো হবে। পাকিস্তান ইনসেনটিভ দেওয়ার কারণেই তাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। বাংলাদেশ ইনসেনটিভ দিলে আমাদের আয়ও ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। এটা সরকারের সিদ্ধান্তে হবে। এখানে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে না।

সমকাল: মানব পাচারের কারণে গত বছর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছিল। সরকারের কড়াকড়িতে সাগরপথে পাচার বন্ধ হলেও, আকাশপথে আগের অবস্থা আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

নূরুল ইসলাম: পুলিশ কয়েক মাসে অনেক পাচারকারী ও পাচারের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার করেছে। আমরা নমনীয় হলে তারা আটক হতো না। সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানেই আছে। যারা বৈধ পথে বিদেশে কাজ করতে যায় বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় শুধু তাদের ছাড়পত্র যাচাই করে। যারা অবৈধভাবে যায়, তাদের ঠেকাবো কীভাবে? তারপরও বিমানবন্দরে আমাদের কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত ছিলেন, এটা জানার সঙ্গে ২৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা নিরাপদ অভিবাসনকে সুযোগ দেব না।

সমকাল থেকে তুলে ধরা হয়ছে