Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঢাকায় ‘এটিএম’ জালিয়াতি, সন্দেহভাজন একাধিক বিদেশী

১২ই ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের একাধিক গ্রাহকের মোবাইলে মেসেজ আসে যে তাঁদের একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ ওই গ্রাহকরা কেউই নিজেরা সে টাকা তোলেন নি! এঁদের প্রত্যেকেই তড়িৎ বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। একসঙ্গে একাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নামে। আর তাতে বেরিয়ে আসে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারে, ইস্টার্ন, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) রাজধানীর ছয়টি বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে দুই শতাধিক কার্ড থেকে গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য চুরির পর কার্ড ক্লোন করে এসব একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয় জালিয়াতকারীরা। আর এই জালিয়াতির ঘটনায় একাধিক বিদেশী নাগরিক জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তদন্তে মিরপুরের কালশী এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি সিটি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা গেছে। ঐদিন সকাল আটটায় একজন ভিনদেশির সঙ্গে একজন বাংলাদেশিকে বুথটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। উভয়ের বয়স ৩৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে। সাজপোশাকে নিপাট ভদ্রলোক। দুজনের পরনেই ছিল কালো রঙের জ্যাকেট। সাধারণভাবে দেখে তাঁদের সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। বিদেশি লোকটি এগিয়ে যান বুথে। তাঁকে আড়াল করে ঘিরে রাখেন সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি। ফাঁকে বুথের নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে টুকটাক কথাও বললেন বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে সময় নেওয়া হয় দেড় মিনিট। স্বল্প এই সময়ের মধ্যে বিদেশিটি ওই বুথের কার্ড রিডারের অংশে স্কিমিং ডিভাইস বা গ্রাহকের কার্ডের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরির যন্ত্রটি বসিয়ে দেন। এরপর চলে যান দুজনই। ওই দিনই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই ব্যক্তিরা (বিদেশির সঙ্গে বাংলাদেশি) এসে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ডিভাইসটি খুলে নিয়ে যান। যন্ত্রটি বসানো ও খুলে নেওয়ার সময় বুথের পাশ দিয়ে সাধারণ মানুষের বেশ আনাগোনা ছিল।

chardike-ad

ভিডিও চিত্র পর্যালোচনাকারী বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা—এই ১০ ঘণ্টায় কালশী বুথটিতে ৬৪টি কার্ডের লেনদেন হয়। যার মধ্যে ৩২টি সিটি ব্যাংকের নিজস্ব গ্রাহকের বাকি ৩২টি অন্যান্য ব্যাংকের কার্ড। তথ্য চুরি করা কার্ডগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংকের তিনটি কার্ড ক্লোন করে তা দিয়ে ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরা, মিরপুরে একাধিক দফায় লেনদেন করে তিনজন গ্রাহকের হিসাব থেকে ৫০ হাজার, ২০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। টাকা তোলার ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংকের কোনো বুথ ব্যবহার করা হয়নি।

এদিকে ভিন্ন আরেকটি ঘটনায় বনানী থানায় বেসরকারি ইউসিবি ব্যাংকের করা মামলার এজাহারের সঙ্গে একটি এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিও জমা দেয়া হয়েছে, যাতে একজন ‘বিদেশির মুখাবয়ব’ ধরা পড়েছে বলে তাদের দাবি। এই সন্দেহের কথা জানিয়ে ওই বিদেশির বাংলাদেশ থেকে পালানো ঠেকাতে পুলিশকে বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে নজরদারি চালাতে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ইউসিবি কর্তৃপক্ষ মামলা করে, যার তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত যেসব ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে একাধিক বিদেশি এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে। একজনের ছবির সঙ্গে অন্যজনের ছবি মিলছে না। তবে বিদেশির সঙ্গে দেশীয় লোকও রয়েছে। তাই এটি সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাজ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিন ব্যাংক ও যেসব এটিএম বুথে বিশেষ যন্ত্র বসানো হয়েছিল, সেসব বুথ পরিদর্শন করা হয়। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা রোধে ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।