Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আজ কোরিয়ার ‘সামিল’ স্বাধীনতা আন্দোলন দিবস

জাপানিজদের শাসন থেকে মুক্তির জন্য কোরিয়ানদের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় ১৯১৯সালের এই দিনে। কোরিয়ান ভাষায় ‘সাম’ মানে তিন আর ‘ইল’ মানে এক। ১৯১৯ সালের মার্চ মাসের এক তারিখ থেকে জাপানিজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয় বলে এই আন্দোলন ‘সামিল’ (সাম+ইল)নামে পরিচিত। ইংরেজিতে এই আন্দোলন Samil Independence Movement এবং March First Movement নামে পরিচিত। এই আন্দোলন নিয়ে বাংলা টেলিগ্রাফের বিশেষ প্রতিবেদন।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

chardike-ad

১৯১০ সালে জাপান কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত কোরিয়ানদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে জাপান এবং আমেরিকায় কোরিয়ানরা ছোট পরিসরে এর প্রতিবাদ শুরু করে। মূল প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ১৯১৯ সালে ৮ জানুয়ারী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উইলসনের প্যারিস শান্তি সম্মেলনে “Fourteen Points” ভাষণের পর। এই সময় কোরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট রি সোং মান এর নেতৃত্বে আমেরিকার হাওয়াই এ গঠিত হয় কোরিয়া ন্যাশনালিস্ট এসোসিয়েশন। সংগঠনটি প্যারিস সম্মেলনে কোরিয়ার স্বাধীনতা বিষয়টি নজরে আনার চেষ্টা করেন। অনেক চেষ্টা করার পরও বিভিন্ন কারণে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি।

3.1
সামিল আন্দোলনের সময় রাস্তায় হাজার হাজার কোরিয়ান জনতা

সামিল আন্দোলন শুরু যেভাবে

জাপানে অধ্যয়রত কোরিয়ান ছাত্রছাত্রীরা ১৯১৮ সালের ডিসেম্বরে গোপনভাবে কোরিয়াকে স্বাধীন করার জন্য  Korean Youth Independence Corps নামে একটি সংগঠন তৈরী করে। সংগঠনটি কোরিয়ান, জাপানিজ এবং ইংরেজি তিন ভাষায় “Declaration of Independence”  এর ড্রাফট তৈরী করে। ড্রাফটি কোরিয়াতে পাঠানো হয় এবং জানানো হয় ৮ ফেব্রুয়ারী জাপানের কোরিয়ান ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিবে।

ঘোষণা অনুযায়ী ৮ ফেব্রুয়ারী সকল সংবাদপত্রে স্বাধীনতা ঘোষণার একটি পত্র পাঠানো হয়। জাপানের মন্ত্রী পরিষদ, কোরিয়ায় নিযুক্ত গভর্ণরসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এর কপি পাঠানো হয়। সেইদিন বিকেলে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনের উদ্দ্যেশ্যে জড়ো হতে থাকে। কিন্তু পুলিশ তাদের শেষ পর্যন্ত তাদেরকে এক হতে দেয়নি। ঘটনাস্থল থেকে ২৭জনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিকভাবে আন্দোলন থেমে যেতে বাধ্য হয়।

3.1_2
আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করছে মিলিটারী পুলিশ

সামিল আন্দোলন এবং এর ফলাফল

১ মার্চে কোরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেন ৩৩জন কোরিয়ান জাতীয়তাবাদী। সিউলের জোংনো’র একটি রেস্টুরেন্টে এই ৩৩জন একটি বৈঠকে মিলিত হন। প্রথমদিকে তারা সংঘর্ষ এবং প্রাণহানি এড়াতে শান্তিপুর্ণ আন্দোলনের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারী কোরিয়ান ভাষা এবং জাপানিজ ভাষায় The Independence News নামে একটি স্বাধীনতা পত্র তৈরী করে ২১ হাজার কপি প্রিন্ট করা হয়।

পত্রটি ১ মার্চ কোরিয়ার সিউল, পিয়ংইয়ংসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকাগুলোতে (বর্তমান উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া) প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। সকালে লিফলেট বিলি হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দুপুর গড়ানোর আগেই বিভিন্ন স্থানে মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। ২টার দিকে জনতা কোরিয়ার পতাকা উত্তোলন করে। একজন ছাত্র ছোং জে ইয়ং স্বাধীনতা পত্রটি উপস্থিত জনতাকে পড়ে শোনান। সিউল প্রকম্পিত হয় ‘মানসে (만세-Long live Korea)’ শ্লোগানে। উপস্থিত জনতা সিউলের দকসোগুং প্যালেস, জোংনো, আমেরিকান দূতাবাস, ফ্রান্স দূতাবাসসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল শুরু করে। পথে পথে পুলিশ বাধা দেওয়া শুরু করে। এর মধ্যেই আন্দোলনের ডাক দেওয়া নেতাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

নেতাদের  গ্রেফতারের পর আন্দোলনের গতি বেড়ে ক্রমেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আন্দোলনের গতি বাড়তে থাকলে জাপানিজ কলোনিয়াল সরকার মিলিটারী পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমন করতে থাকে। প্রায় একবছর এই আন্দোলন অব্যাহত ছিল। চুড়ান্ত সাফল্য না দেখলেও এই আন্দোলনকেই কোরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ধাপ মনে করা হয়।

বছরব্যাপী এই আন্দোলনে অংশ নেয় প্রায় ২০লাখ কোরিয়ান। কোরিয়ান সরকারের বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী আন্দোলনে প্রাণ হারায় ৭৫০০ এবং আহত হয় ১৬ হাজার জন কোরিয়ান। ৪৭ হাজার কোরিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য স্থাপনা।  দিনটিকে কোরিয়ানরা গর্বের সাথে স্মরণ করে থাকে।