Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সফটওয়্যারের দিকে ঝুঁকছে স্যামসাং

Samsungবৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রভাবশালী কোম্পানি স্যামসাং। মোবাইল ডিভাইসের পাশাপাশি অন্যান্য হার্ডওয়্যার বাজারে স্যামসাং অনুপস্থিত, তা কিন্তু নয়। স্মার্টঘড়ি থেকে শুরু করে স্মার্টটিভি, স্মার্ট রেফ্রিজারেটর, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট (ভিআর), ল্যাপটপ, নোটবুকসহ প্রায় সব ধরনের হার্ডওয়্যার তৈরি করে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান। হার্ডওয়্যার খাতে প্রভাব বিস্তার করলেও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের জন্য নির্ভর করতে হয় অন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর। বিশেষ করে স্মার্টফোন ডিভাইস সরবরাহের ক্ষেত্রে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ওপরই প্রতিষ্ঠানটি নির্ভরশীল। বিভিন্ন কোম্পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবার তাই সফটওয়্যারের দিকেও ঝুঁকছে স্যামসাং। গত সপ্তাহে বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তা ও দর্শকদের সামনে এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল কমিউনিকেশন বিভাগের প্রেসিডেন্ট ডংজিন কো। খবর জাপান টুডে।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের চাবি হলো কোডিং। বর্তমান প্রযুক্তি খাতের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোডিংয়ের ওপর নির্ভর করে চলছে। কারণ, যেকোনো ধরনের হার্ডওয়্যার আনুষঙ্গিক সফটওয়্যার ছাড়া কর্মহীন। স্যামসাং এজন্য হার্ডওয়্যার নির্মাতার চেয়ে সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছে। অর্থাত্ প্রবৃদ্ধির জন্য সফটওয়্যারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ চেষ্টা সফল হলে আমাদের পণ্যগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ইকোসিস্টেম তৈরি হবে। বিশেষত, স্যামসাং উত্পাদিত হার্ডওয়্যারে নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে আমাদের পণ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি আরো জোরালো হবে।’

chardike-ad

ডংজিন কো বলেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে এক সময় রমরমা পরিস্থিতি ছিল, যা এখন অনেকাংশে কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট বাজারে এখন স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। স্যামসাংসহ খাতটিতে আধিপত্য বিস্তার করে থাকা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ডিভাইস বিক্রি হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। স্মার্টফোন বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বেড়েছে। নিয়মিত নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান খাতটিতে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে, চীনভিত্তিক একাধিক ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাজার দখল বাড়াতে আগ্রাসী মূল্যনীতি অনুসরণ করছে। সুলভ মূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আকর্ষণীয় নকশা এবং উচ্চ মূল্যের ডিভাইসের সব সুবিধা পাওয়ায় গ্রাহকরাও এখন এসব প্রতিষ্ঠানের ডিভাইসের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন।

স্যামসাং সফটওয়্যার বাজারে একেবারে নতুন সেটা কিন্তু নয়। এরই মধ্যে ‘টাইজেন’ অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার, বিভিন্ন সেবা, হার্ডওয়্যার এবং নিরাপত্তার বিষয়টিকে একই ইকোসিস্টেমের মধ্যে ইন্টিগ্রেট করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সফটওয়্যারটি নিজেদের সেবা ও হার্ডওয়্যারে আরো অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। এক্ষেত্রে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলকে অনুসরণ করতে যাচ্ছে স্যামসাং। অ্যাপল নিজেদের হার্ডওয়্যারে বরাবরই নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ কাজ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। বৈশ্বিক স্মার্টফোন অপারেটিং বাজারে অ্যান্ড্রয়েড দিয়ে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে গুগল। এক্ষেত্রে স্যামসাং টাইজেনভিত্তিক ডিভাইস সরবরাহ করে কতটা সফল হবে, তা নিশ্চিত নয়। গ্রাহকরাও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমভিত্তিক স্যামসাং স্মার্টফোন ব্যবহার করে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

টাইজেন হলো লিনাক্সভিত্তিক ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম প্লাটফর্ম; যা প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ গ্যালক্সি গিয়ার স্মার্টঘড়ি, সাশ্রয়ী স্যামসাং জেড সিরিজের স্মার্টফোনে ব্যবহার শুরু

হয়েছে। টাইজেন চালিত ডিভাইস মূলত স্মার্টফোনের উদীয়মান বাজার বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলংকায় বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি স্যামসাং ‘কানেক্টেড কার সার্ভিস’-এ ব্যবহার করা হচ্ছে টাইজেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন সফটওয়্যারের উপযুক্ত ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চাইলে প্রথমত. ডেভেলপারদের ওপর ভরসা বাড়াতে হবে। যাতে টাইজেন প্লাটফর্মের জন্য তারা প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া আরো বেশি পরিমাণ ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস সমর্থনযোগ্য করে তোলা সম্ভব হবে না অপারেটিং সিস্টেমটিকে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময় প্রযুক্তি খাতের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা নীতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। চিপ নির্মাতা ইন্টেল থেকে শুরু করে কোয়ালকম এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন হার্ডওয়্যারের পরিবর্তে সফটওয়্যার বিক্রি এবং ক্লাউড ব্যবসায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য আসন্ন অ্যাটম চিপ তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করেছে ইন্টেল। স্যামসাং ব্যবসায় নীতিতে পরিবর্তন এনে কতটা সফল হয়, তা জানতে এখন অপেক্ষা করতে হবে।