Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করছেন ৫২৭ কোরিয়ান

গ্যালাক্সি নোট ৭-এর দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না স্যামসাংকে। কোরিয়াভিত্তিক বৈশ্বিক টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন সে দেশেরই ৫২৭ নাগরিক। যদিও গৃহস্থালি পর্যায়ে রয়ে যাওয়া নোট সেভেনগুলোকে পরবর্তীতে নোট এইট দিয়ে বদলানোর ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর এপি, গ্যাজেট থ্রিসিক্সটি।

নোট সেভেনের আগুনে এখনো পুড়ছে স্যামসাং। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকালও স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ৫২৭ কোরিয়ান। দেশটির আইনি প্রতিষ্ঠান হারভেস্ট ল ফার্মের প্রধান অ্যাটর্নি পিটার ইয়ং-ইল কো জানান, স্যামসাংয়ের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছেন এরা সবাই।

chardike-ad

এসব ক্রেতার বক্তব্য, ফোন বদলানোর জন্য দোকানে আসা-যাওয়া বাবদ তাদের ব্যয় হয়েছে বেশকিছু অর্থ। একই সঙ্গে ফোন বদলানোর আগে সেখান থেকে অন্য ডিভাইসে তথ্য স্থানান্তর করতেও সময় ব্যয় হয়েছে অনেক। এছাড়া বিপজ্জনক ডিভাইসটি চালু রাখতে গিয়েও তাদের সর্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকতে হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ততার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের।

পিটার ইয়ং-ইল কো জানান, মামলা দায়েরকারীদের মধ্যে একজন নোট ৭-এর বিস্ফোরণে একটি পারিবারিক ভ্রমণের প্রায় হাজারখানেক ছবি হারিয়েছেন। আরেকজনের দাবি, সেলফোনটি বদলাতে গিয়ে তাকে গাড়ি ড্রাইভ করতে হয়েছে আট ঘণ্টা।

স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারীদের মধ্যে আরেকজন কিম চায়ে ইয়ং জানান, প্রথম দফায় স্মার্টফোন বদলাতে গিয়েই তার গ্যাস ও হাইওয়ে ফি দিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। চেওনানের নিজ বাসস্থান থেকে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাকে ফেরত আসতে হয় বুসানে। এর পর দ্বিতীয় দফায় ডিভাইস ফেরত চেয়ে স্যামসাংয়ের ঘোষণা প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, ‘নিজেকে প্রতারিত মনে হচ্ছে। আমি ক্ষুব্ধ। জীবনে আর কখনো এটি ব্যবহার করতে চাই না আমি।’

অ্যাটর্নি পিটার ইয়ং-ইল কো নিজেও দীর্ঘসময় ধরে স্যামসাং ব্যবহার করছেন। আগস্টে বাজারে আসার পর একটি নোট ৭ ডিভাইস তিনি নিজেও কিনেছিলেন। এর পর সেলফোনটি নিয়ে তিনবার মোবাইল শপে আসতে হয়েছে তাকে। ডিভাইসটিতে আগুন ধরে যাওয়ার খবর সামনে আসার পর সেলফোনটি পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় এসেছিলেন স্যামসাংয়ের ডিভাইস বদলে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর। শেষবার স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে স্মার্টফোনটি আবার চেয়ে পাঠানো হলে মোবাইল শপে ডিভাইস নিয়ে আসেন তিনি।

স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি নোট সেভেন ডিভাইসটি বাজারে ছাড়া হয়েছিল চলতি বছরের ১৯ আগস্ট। বাজারে ছাড়ার পর থেকেই ডিভাইসটিতে একের পর এক বিস্ফোরণের অভিযোগ পেতে থাকে স্যামসাং। ডিভাইসের অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার প্রবণতাই এসব বিস্ফোরণের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর পর বাজারে দুই মাসও টিকতে পারেনি ডিভাইসটি। এক দফায় ডিভাইস বদলে দেয়ার পর চলতি মাসের শুরুর দিকে স্মার্টফোনটির উত্পাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ ঘোষণা করে স্যামসাং।

৫২৭ কোরীয় নাগরিকের মামলা প্রসঙ্গে এপির পক্ষ থেকে স্যামসাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। গ্যালাক্সি নোট ৭ নিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে স্যামসাং। অভিযোগ রয়েছে, অ্যাপলের আইফোন ৭-এর মোকাবেলা করতে গিয়ে বাজারে তাড়াহুড়া করে ডিভাইসটি ছেড়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। নোট ৭-এর উত্পাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধের ঘোষণার পর হুহু করে নামতে থাকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য। একই সঙ্গে সামনের দিনগুলোয়ও প্রতিষ্ঠানটির প্রচুর মুনাফা হারানোর শঙ্কার কথা জানান বিশ্লেষকরা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন ঘোষণা দিয়েছে স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গ্যালাক্সি এস৭ ও এস৭ এজ স্মার্টফোনের ক্রেতাদের গ্যালাক্সি এস৮ ও এস৮ ডিভাইস কেনার সময় ৫০ শতাংশ মূল্যছাড় দেয়া হবে। আগামী বছরেই ডিভাইসটি বাজারে ছাড়বে স্যামসাং।

এর আগে নোট ৭ ব্যবহারকারীদের জন্য ৩০ হাজার ওন (২৬ ডলার) সমমূল্যের কুপন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল স্যামসাং। একই সঙ্গে ডিভাইসটির বদলে যারা প্রতিষ্ঠানটির অন্য স্মার্টফোন নেবেন, তাদের সবাইকে ৭০ হাজার ওন (৬২ ডলার) সমমূল্যের কুপন উপহারের ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এত কিছুর পরও বাজারে সুনাম পুনরুদ্ধারে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে স্যামসাং। কখনো কখনো নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি এস৭-এ আগুন ধরার বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য স্যামসাংয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ আনেন চৈনিক যুবক ঝ্যাং সাইতোং। যদিও এ অভিযোগের বিষয়েও কোনো বক্তব্য রাখেনি স্যামসাং।