কেলেংকারীতে বিপর্যস্ত দক্ষিণ কোরিয়া। আলোচিত ছোয়ে সুন সিলের গ্রেফতারের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন ঘটনা। কৌঁসুলিরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন এবং মধ্যবর্তী ফলাফলও জানানো শুরু করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার কৌঁসুলিরা গতকাল স্যামসাং গ্রুপ ও ন্যাশনাল পেনশন সার্ভিসের (এনপিএস) কয়েকটি অফিসে তল্লাশি চালিয়েছেন। গত বছর স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি-চেইল ইন্ডাস্ট্রিজ অধিগ্রহণ চুক্তিতে এনপিএসের অনুমোদন-সংক্রান্ত তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল এ অভিযান চালানো হয় বলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ইয়নহাপ জানিয়েছে।
স্যামসাংয়ের এক মুখপাত্র জানান, সিউলের নিকটবর্তী খাংনামে অবস্থিত কোম্পানিটির সদর দপ্তরে গতকাল কৌঁসুলিরা কয়েক ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালান। অন্যদিকে এনপিএসের এক মুখপাত্র জানান, জনজু শহরে প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তরেও কৌঁসুলিরা হানা দিয়েছেন। পাশাপাশি তারা এনপিএসের সিউল অফিসেও অভিযান চালিয়েছেন বলে ওই মুখপাত্র জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৌঁসুলি জানান, তারা চারটি অবস্থানে অভিযান চালিয়েছেন। এগুলো হলো— এনপিএসের সদর দপ্তর, এনপিএস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস, স্যামসাং গ্রুপের সদর দপ্তর ও এনপিএসের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক সাবেক কর্মকর্তার কার্যালয়।
সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পাক গুন হে ও তার ঘনিষ্ট বান্ধবী ছোয়ে সুন সিলকে ঘিরে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের প্রভাব খাটিয়ে স্যামসাং, হুন্দাই ও এলজির মতো কনগ্লোমারেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছেন ছোয়ে সুন সিল। আর এতে সহায়তা করেছেন পার্ক গুন হে নিজে।
সর্বব্যাপী কেলেঙ্কারির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ছোয়ে সুন সিলের চাঁদাবাজি এবং এতে পার্ক গুন হে ও তার দুই সহযোগীর সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তদন্ত চলছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কৌঁসুলিরা রোববার পার্কের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাকে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ফৌজদারি তদন্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কৌঁসুলিরা যে গতকালই প্রথম স্যামসাংয়ের দপ্তরে অভিযান চালালেন, তা নয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় তারা স্যামসাংয়ের খাংনাম অফিস ও এর একটি বিজ্ঞাপন-সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি জব্দ করেছেন। পাশাপাশি তারা স্যামসাং ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এসব কর্মকর্তার মধ্যে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ভাইস চেয়ারম্যান লি জেএ ইয়োং অন্যতম।
তবে বুধবারের অভিযানের কেন্দ্রে ছিল গত বছর স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি ও চেইল ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যকার স্বাক্ষরিত অধিগ্রহণ চুক্তি। এ চুক্তির মাধ্যমে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ওপর লি জেএ ইয়োংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরো জোরালো হয়েছে। ইয়োনহাপ জানিয়েছে, গতকাল এনপিএসের সাবেক প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা হোং ওয়ান-সুনের অফিসেও অভিযান চালানো হয়েছে। ৮০০ কোটি ডলারের স্যামসাং-জেইল চুক্তির প্রধান সমর্থক ছিলেন তিনি।
অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের হেজ ফান্ড এলিয়ট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করেছে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য চুক্তিটি পুরোপুরি অন্যায্য ছিল।
প্রকাশ্য যুদ্ধের পর এনপিএসের সহযোগিতায় স্যামসাং চুক্তিটির অনুমোদন পায়। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম পেনশন তহবিল এনপিএস স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির শীর্ষ একক বিনিয়োগকারী। প্রতিষ্ঠানটির ১১ দশমিক ২ শতাংশ ভোটিং ক্ষমতা রয়েছে এনপিএসের নিয়ন্ত্রণে।
সংস্থাটির বিনিয়োগ কমিটি গত বছর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অধিগ্রহণ চুক্তিটির পক্ষে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে আটজন শিক্ষাবিদ ও একজন আইনজীবীর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলের যাচাই-বাছাই ছাড়াই চুক্তিটি অনুমোদিত হয়।