Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরীয় উপদ্বীপে নতুন করে পুরনো প্রতিযোগিতা

korea-war

কোরীয় উপদ্বীপ ঘিরে আবারো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একদিকে উত্তর কোরিয়ার তরুণ নেতা কিম জং উনের একের পর এক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, অন্যদিকে এর বিরুদ্ধে মেজাজি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি। এরই মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপে পৌঁছেছে মার্কিন নৌবহর ইউএসএস কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ। উদ্দেশ্য, কোরীয় উপদ্বীপে নিজেদের খবরদারি প্রতিষ্ঠা। সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ‘পরমাণু বোমা ব্যবহার হলে তার কড়া জবাব দেবে আমেরিকা। তার দেশ তলোয়ার নিয়ে প্রস্তুত আছে।’ এ ধরনের কথা বলে তিনি বিশ্ববাসীকে কী বার্তা দিতে চাইছেন? তবে কি ধরে নেয়া যায়, একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন? কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, কোরীয় উপদ্বীপ নিয়ে উত্তেজনা নতুন কোনো খবর নয়। পূর্বের কোরীয় উপদ্বীপটি আজ উত্তর কোরিয়া (সমাজতান্ত্রিক) ও দক্ষিণ কোরিয়া (গণতান্ত্রিক) হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৪৮ সালে গঠিত উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্র হিসেবে গঠনে ভূমিকা রাখে তত্কালীন সোভিয়েত বাহিনী (রেড আর্মি) এবং দক্ষিণ কোরিয়া গঠনে ভূমিকা রাখে মার্কিন বাহিনী। ৩৮ ডিগ্রি সমান্তরাল রেখা অনুযায়ী উভয় কোরিয়া বিভক্ত। দুই কোরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় ১৯৫০-৫৩ সাল পর্যন্ত। এ যুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয় যুক্তরাষ্ট্র। কেননা যুদ্ধের বদৌলতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং দেশটিতে মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়, যা অদ্যাবধি আছে, অর্থাত্ যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থায়ী ঘাঁটিতে রূপ নেয় দক্ষিণ কোরিয়া।

chardike-ad

অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানের পরাজয়ের ফলে জাপানকেও যুক্তরাষ্ট্র নিগড়বদ্ধ করে ফেলে। ফলস্বরূপ জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সেনাঘাঁটি আজো বিদ্যমান। তাই কিম জং উনের যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের আক্রমণ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানকে সুরক্ষা দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ৬৭ বছর ধরে কোরীয় উপদ্বীপের সংঘাতময় পরিস্থিতি বিশ্বরাজনীতির একটি উর্বরক্ষেত্র। এবারে এর ব্যতিক্রম নয়। কিম জং উন এরই মধ্যে জানান দিয়েছেন, তাদের একটি বোমা মার্কিন রণতরীকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে পারবে। মার্কিন নৌবহর কোরীয় উপদ্বীপে প্রবেশ করায় কমিউনিস্ট চীন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমেরিকা, জাপান, দুই কোরিয়াসহ সব পক্ষকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। বর্তমান উত্তেজনার মূলে রয়েছে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের অব্যাহত পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, যা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

আমরা জানি, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি বাতিলে বেইজিংয়ে ছয় জাতির (চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া) আলোচনা ভেস্তে যায়। কেননা উত্তর কোরিয়ার শর্ত ছিল বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় কোনো ধরনের আগ্রাসন চালাবে না— এর লিখিত নিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও বারাক ওবামাও পারমাণবিক প্রশ্নে উত্তর কোরিয়া ও ইরানকে কোনো ছাড় দেননি। তবে বারাক ওবামার শাসনকালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যা ওবামার একটি কূটনৈতিক সাফল্য বলে বিবেচিত। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন বলা চলে। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে প্রতিবেশী চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা যেখানে অনেকটা নীরব, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশগুলোর ভূমিকা চোখ রাঙানোর পর্যায়ে পৌঁছেছে। গ্রেট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি জাতীয়তাবাদী চেতনার পরিবর্তে যুদ্ধনীতিতে কতটুকু সক্রিয় হয়ে ওঠেন, এটি এখন দেখার বিষয়। তার নির্দেশে ইয়েমেন, সিরিয়া, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এখন কোরীয় উপদ্বীপ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যেকোনো ধরনের বাগাড়ম্বর হিতে বিপরীত হতে পারে এবং এক্ষেত্রে আরেকটি বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

লেখক: নিবন্ধকার