‘থাই এয়ারওয়েজের ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯৯টি ফ্রি টিকিটের মধ্যে আপনি দুইটি টিকিট বিনামূল্যে পাচ্ছেন। টিকিটটি সংগ্রহের জন্য লিংকে ক্লিক করুন (Click here to claim it now)।’
সম্প্রতি ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের ওয়ালে এমন পোস্ট দেখে অনেকেই ক্লিক করেছেন। পুরস্কারের টিকিট পেতে অনেকেই থাই এয়ারওয়েজের ভুয়া ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘ওকে’ বাটনে ক্লিক করেছেন। পুরস্কার তো দূরের কথা হ্যাকদের তৈরি অ্যাপসে ‘ওকে’ বাটনে ক্লিক করে অনেকেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছেন হ্যাকারদের হাতে। ভবিষ্যতে আপনার ফেসবুক ওয়ালে অশ্লীল ও বিব্রতকর ছবি পোস্ট হলে বুঝবেন আপনি নিজেই এর জন্য দায়ী ছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুক নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন। ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকর্মী, শিক্ষক এমনকি বাবা-মাও থাকেন। ফলে আমরা ফেসবুকে কী করছি বা কী পোস্ট করছি -তা সবার নজরে পড়ছে। অনেকের ফেসবুক ওয়ালে পাবলিক অ্যাকসেস থাকে, ফলে সবাই তার ওয়াল পোস্ট দেখতে পারেন। তাই আপনার যেকোনো পোস্টের জন্য বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন বা অসম্মানবোধ করতে পারেন। ইদানিং ফেসবুকের কিছু আপত্তিকর পোস্টের কারণে অনেককেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। দিনে দিনে এই ধরনের স্প্যামিংয়ের ঘটনা বাড়ছেই।
তেমনি নতুন একটি স্প্যামিং অ্যাপস এর আবির্ভাব হয়েছে। সম্প্রতি থাই এয়ারওয়েজ ও এয়ার এশিয়ার জন্মদিনের নামে ফ্রি টিকিট দেয়ার অফারে এই স্প্যাম লিংক ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। ইতোমধ্যে হ্যাকারদের পাতা এই ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকেই।
ফেসবুক স্প্যাম অ্যাপস মূলত চারভাগে বিভক্ত: ১। ক্লিক জ্যাকিং, ২। লাইক জ্যাকিং, ৩। ম্যালিশিয়াস কোড এবং ৪। ম্যালিশিয়াস ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন।
সম্প্রতি ফ্রি টিকিট সম্বলিত এই অ্যাপসগুলো ম্যালিশিয়াস কোড বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা এক ধরনের স্প্যামিং, যা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
ম্যালিশিয়াস স্ক্রিপ্টিংয়ে হ্যাকারেরা ব্যবহারকারীকে সাধারণত আকর্ষণীয় বা লোভনীয় অফারসহ লিংক দিয়ে থাকে। ব্যবহারকারী ওই লিংকটি ব্রাউজ করলে ম্যালিশিয়াস স্ক্রিপ্টিংটি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই স্ক্রিপ্টিংটি মেজেস পাঠানো, ফেসবুক ইউজারের ওয়ালে লেখা, ফেসবুক ফ্রেন্ডদের ওয়ালে অশ্লীল ছবি ও লেখাসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহারকারীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
হ্যাকারদের তৈরি বিশেষ এই অ্যাপসটি যেই ওয়েবসাইট থেকে ছড়ানো হচ্ছে সেটি দেখতে অনেকটাই সংশ্লিষ্ট বিমান কোম্পানির (থাই এয়ারওয়েজ ও এয়ার এশিয়া) অফিশিয়াল ডোমেইনের মতো হওয়ার কারণে ব্যাবহারকারীরা ফাঁদে বেশি পা দিচ্ছেন।
ব্যবহারকারীদের বোকা বানানোর জন্য ওয়েবসাইটের শুরুতে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন করা হয় এবং টিকিটের বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়। দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে বলা হয়, ফেসবুকে শেয়ার দিতে এবং অ্যাপসের অনুমতি দিতে। সেখান থেকেই আপনার যুক্ত থাকা সকল গ্রুপ এবং সকল বন্ধুদের মেসেজ পাঠানোর অনুমতি নিয়ে নেয় তারা। অনেকেই বিশ্বাস করে শেয়ার এবং অ্যাপসের অনুমতি দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন।
সুতরাং, সতর্ক থাকুন স্প্যামারদের হাত থেকে। কারণ, তাদের পরবর্তী টার্গেট হতে পারেন আপনিও।