Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সিএনএনকে ‘পেটালেন’ ট্রাম্প

trumpযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ‘পিটিয়েছেন’। তিনি সিএনএনের লোগো মাথায় লাগানো এক ব্যক্তিকে বেদম পিটুনি দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

কয়েক সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রেসলিংয়ের রিংয়ের পাশে এক ব্যক্তিকে ট্রাম্প ইচ্ছেমতো ‘কিল–ঘুষি’ মারছেন। ট্রাম্প যে ব্যক্তির ওপর চড়াও হয়েছেন, তার মাথায় কম্পিউটারের মাধ্যমে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বুমে লোগো বসানো হয়েছে। গতকাল রোববার ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই ভিডিও করেছেন।

chardike-ad

২০০৭ সালের ডব্লিউডব্লিউই রেসলিংয়ের একটি খেলায় উপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেদিন তিনি এ ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক ভিন্স ম্যাকমোহনের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। যদিও এ ‘আক্রমণ’ যে ট্রাম্প করছেন, যার পুরোটাই ছিল পরিকল্পিত ও লিখিত। ওই দিনের একটি ভিডিও পরিবর্তন করে গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, তিনি ও ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক ভিন্স ম্যাকমোহনের ওপর চড়াও হয়েছেন। ম্যাকমোহনকে ফেলে ‘কিল-ঘুষি’ মারছেন ট্রাম্প। সেই ভিডিওটিই টুইটারে প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে ম্যাকমোহনের মুখ সিএনএনের লোগো দিয়ে ঢেকে দেওয়া ছিল, যেন ট্রাম্প সিএনএনকেই পেটাচ্ছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইন্টারনেট ফোরামে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এই ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সিএনএন অভিযোগ করে বলছে, সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আমেরিকার ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট একটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এমন নগ্ন অবস্থান নেননি বলে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা হচ্ছে। রেসল্ম্যানিয়া নামের প্রতিবছরের কুস্তি প্রতিযোগিতা আমেরিকায় খুব বিখ্যাত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব প্রতিযোগিতায় গিয়েছেন একজন পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। সেখানে তিনি ভিডিও ধারণও করেছেন। এ রকমই এক পুরোনো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প ঘুষি মারছেন, আর প্রতিপক্ষ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। ভিডিওটি শেষ হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক সিএনএনকে দেওয়া নতুন নাম এফএনএন (ফ্রড নিউজ নেটওয়ার্ক) দিয়ে। এর আগে সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ প্রথিতযশা সংবাদমাধ্যমকে তিনি ‘ফেক নিউজ’ বলে উল্লেখ করে আসছিলেন। গতকাল দেওয়া টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সিএনএন এখন এফএনএন (ফ্রড নিউজ নেটওয়ার্ক)।

একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ প্রচারিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া জগৎ এবং উদারনৈতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। একজন প্রেসিডেন্ট কত নিচে নামতে পারেন, এ নিয়ে চলছে আলোচনা।

সিএনএন তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ‘যখন প্রেসিডেন্ট একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সহিংসতার সমর্থক হয়ে ওঠেন, তখন দিনটি খারাপ হয়ে ওঠে।’ সিএনএন বলেছে, যখন প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, স্বাস্থ্যসেবা বিল নিয়ে কাজ করার কথা, তখন কিশোর অপরাধীর মতো আচরণ প্রেসিডেন্টের মর্যাদা অনেক নিচে চলে যায়। সিএনএন বলেছে, ‘আমরা আমদের কাজ করে যাব, প্রেসিডেন্টকেও তাঁর নিজের কাজ শুরু করা উচিত।’

নিউইয়র্ক টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক ডিন বাকুয়েট তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সাংবাদিকের নিজের কাজের জন্য প্রেসিডেন্ট এমন কাজ করে থাকতে পারেন এবং নিজের ক্ষুব্ধতা এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার গোষ্ঠীগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন বিদ্রূপ করা ভিডিও দিয়ে টুইট করাকে ‘নিম্নমানের ভাঁড়ামো’ বলে উল্লেখ করছে। একাধিক উদারনৈতিক রাজনীতিবিদেরাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন আচরণের সমালোচনা করে নিন্দা জানিয়েছেন। সাবেক স্পিকার এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, সংবাদমাধ্যমকে লক্ষ্য করে সহিংসতা সমর্থন করে—এমন ভাঁড়ামো প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

এমন সব নিন্দা আর হাসিঠাট্টার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা দমে নেই। তাঁরা সিএনএনকে ধরাশায়ী করা টুইট বার্তা ও ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন। এটিকে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া টুইট বলে মনে করা হচ্ছে।