Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জন্ডিসের চিকিৎসা মাত্র ২০ টাকায়!

kobirajরাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার সংলগ্ন একটি বন্ধ দোকানের সামনে মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ৭টায় বসে ছিলেন ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। গোলাপি রংয়ের শার্ট , চেক লুঙ্গি ও স্যান্ডেল পরিহিত এ বৃদ্ধের সামনে একটি বালতি, একটি বোল, একটি বদনা, একটি ছোট পাত্রে চুন ও কয়েকটি বোতল সাজানো। বৃদ্ধকে ঘিরে এ সময় দাঁড়িয়ে কয়েকজন নারী, পুরুষ ও শিশু। এই এলাকায় সবাই তাকে ইসমাইল কবিরাজ নামে চেনেন।

লিজা মনি নামের এক তরুণী তার তিন বছরের শিশু পুত্রকে কোলে নিয়ে বৃদ্ধের সামনে রাখা প্লাস্টিকের মোড়ায় বসলে বৃদ্ধ চামচ দিয়ে এক চা চামচ চুন শিশুটির দুই হাতে দেন। এ সময় বৃদ্ধ বদনা দিয়ে শিশুটির হাতে পানি ঢালতে ঢালতে অস্ফুট স্বরে বিড় বিড় করে কিছু একটা বলতে থাকেন।

chardike-ad

এ সময় শিশুটির মাকে তার ছেলের দুই হাতে চুন ও পানি দিয়ে ঘষতে দেখা যায়। এরপর বৃদ্ধ একটি বোতল থেকে বের করে ওষুধ খেতে দেন। ওষুধ পেয়ে শিশুটির মা বৃদ্ধের হাতে ২০ টাকা দেন।

কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক অপেক্ষমাণ কয়েকজন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে আলাপকালে জানতে পারেন, এখানে মাত্র ২০ টাকা হাদিয়াতে জন্ডিস রোগের চিকিৎসা হয়। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এ রোগের চিকিৎসা দেন এই বৃদ্ধ কবিরাজ।

কিছুক্ষণ আগে যে শিশুটির চিকিৎসা চলছিল সেই শিশুর মা লিজা মনির কাছে জন্ডিস রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে না গিয়ে কবিরাজের কাছে এসেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, নবাবগঞ্জ বাজারের পাশেই এমবিবিএস ডাক্তারকে সপ্তাহখানেক আগে দেখিয়েছেন। এখনও ছেলে সুস্থ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন। পরিচিত একজনের কাছে এই কবিরাজ চুন পড়া ও ওষুধ খাইয়ে জন্ডিস ভালো করে দেন শুনে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। চিকিৎসা খরচও খুবই কম হওয়ায় ডাক্তারের পাশাপাশি এ বিকল্প চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান।

চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় সবার বক্তব্য প্রায় অভিন্ন। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, ৫শ’ টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখানোর ক্ষমতা তাদের নেই। কবিরাজের চিকিৎসাতেই তারা ভরসা রাখেন।

চিকিৎসার ব্যাপারে ইসমাইল কবিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রমপুরে তার এক ওস্তাদ জন্ডিস ভালো করার ওষুধটি স্বপ্নে পান। ওস্তাদই তাকে শিষ্য হিসেবে চিকিৎসা পদ্ধতি শেখান। গত ১৫ বছর যাবত এ স্থানে তিনি জন্ডিসের চিকিৎসা করছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০জন রোগী চিকিৎসা দেন। কখনও কখনও রোগীর সংখ্যা অর্ধশতও ছাড়িয়ে যায়।

এ ধরনের চিকিৎসায় রোগী আদৌ ভাল হয় কিনা জানতে চাইলে ইসমাইল কবিরাজ বলেন, ‘ভালো করার মালিক তো আল্লাহ, আমি উসিলা মাত্র’। তিনি বলেন, মানুষ উপকার না পেলে এখানে আসতো না। আমলকি, হরতকি ও বয়রাসহ বিভিন্ন গাছগাছালি বাজার থেকে কিনে এনে ওষধু তৈরি করি।