Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

গভীর সংকটে ইসলামী ব্যাংক

Islami-Bankউচ্চপর্যায়ের বড় ধরনের পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বড় ঋণগ্রাহকের কাছে ব্যাংকটির অধিকাংশ মালিকানা কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। মালিকানা পরিবর্তন, পরিচালক বাতিল ও নতুন পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এ অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সময়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীরব। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর আগে রাজনৈতিক কারণে ঘটে যাওয়া পেট্রলবোমা, আগুন দেওয়া ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে ইসলামী ব্যাংক অর্থায়ন করেছে বলে একপক্ষের অভিযোগ। তাই সন্ত্রাসে অর্থায়ন, যুদ্ধাপরাধীর দায়ে দন্ডিত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি তদন্তের দাবি আসে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। মুক্তিযুদ্ধ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাংকটিকে জাতীয়করণের দাবিও ওঠে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকটিতে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

chardike-ad

চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ ম্যানেজমেন্টে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরিয়ে এসব পদে নতুন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর থেকে নতুন ম্যানেজমেন্ট ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করছে বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের শীর্ষ অর্থনৈতিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশ অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের এ পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংকটির এক শীর্ষ ঋণগ্রাহক ব্যাংকটির অধিকাংশ মালিকানা কিনে নিচ্ছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। আমানতকারী ও ঋণগ্রাহকদের স্বার্থে ব্যাংকটির সুশাসনের উন্নতি ঘটাতে হবে। এই ক্রান্তিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার প্রয়োজন রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছে সিপিডি। এতে বলা হয়, ২০১২ সালের ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের তদন্ত সম্পর্কিত স্থায়ী উপকমিটির ‘যুক্তরাষ্ট্রে মানিলন্ডারিং, মাদক ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি : এইচএসবিসি কেস স্ট্যাডি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) সন্ত্রাসে অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত।

গত ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল ৪৫০ কোটি টাকার নিট মুনাফার ভিত্তিতে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ট ঘোষণা করে। ওই বছরের ৮ মে জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি ব্যাংকটির শুরু থেকে লাভ না নেওয়া আমানতকারীদের তথ্য জানতে চায়। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি চেয়ারম্যানকে সরিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক এক সচিবকে চেয়ারম্যান করা হয়। নতুন এমডিও নিয়োগ করা হয়। ১০ জানুয়ারি ৪ কর্মকর্তাকে ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২৩ মে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) তাদের হাতে থাকা ১২.০৮ কোটি শেয়ারের মধ্যে ৮ দশমিক ৭ কোটি শেয়ার বাজারমূল্যে কেনার ঘোষণা দেয়। ২৫ মে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দুদিন পর তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

আইডিবি বিক্রি করে দেওয়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট তিন প্রতিষ্ঠান কিনেছে। তিনটি ব্লক ট্রেডের মাধ্যমে প্রায় ২৭৪ কোটি টাকায় ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬০টি শেয়ার বিক্রি করেছে আইডিবি। পুরো শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে সিএসইতে। এ স্টক এক্সচেঞ্জভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিসেসে এসব শেয়ার কেনাবেচা হয়। ব্রোকারেজ হাউসটির স্বত্বাধিকারী এস আলম গ্রুপ। আইডিবির বিক্রি করে দেওয়া সমুদয় শেয়ার কিনেছে এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, জেডএমসি বিল্ডার্স ও এক্সেলশিওর ইমপেক্স।

নতুন শেয়ার কেনা স্বল্প খাতে দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইতোমধ্যে নতুন দুজন পরিচালক নিয়োগ হয়েছে। জেডএমসি বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচালক হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বাংলাদেশ ব্যাংক এই নিয়োগের অনুমোদনও দিয়েছে। এক্সেলশিওর ইমপেক্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদকে। তবে আবু আসাদের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, নির্দিষ্ট একটি ব্যাংকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্রের কোনো বক্তব্য থাকতে পারে না। তবে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ নিয়মানুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক করছে।

ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তন বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সূচকের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল ইসলামী ব্যাংক্। দেশের অথর্নীতিতে ব্যাংকটি ভালো অবদান রেখে আসছে। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটি সঠিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকটির শীর্ষ ঋণগ্রহীত শীর্ষ মালিকে পরিণত হয়েছেন। এটি ব্যাংকটিকে অধপতনে নিয়ে যাবে। ইসলামী ব্যাংকের চলমান ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ভূমিকা থাকা দরকার, তা দেখছি না। ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তন মসৃণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা থাকা দরকার।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ব্যাংকটির সব কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, রেমিট্যান্স আহরণ সব কিছুই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে হস্তক্ষেপ করতে হবে এমন কোনো ঘটনা ইসলামী ব্যাংকে এখনো ঘটেনি।

সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে হুমকি ও জাকাত ফান্ড, সিএসআর এবং শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেন ফেসবুকে। এর থেকে পরিচালকরা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষাগ্রহণ ছাড়াই ৫০ জনকে নিয়োগের অভিযোগও আসে। তবে পরে আহসানুল আলম ও আব্দুল মাবুদ পিপিএম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

উৎসঃ আমাদের সময়