Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফেসবুকের অপব্যবহার : মেধাবী ছাত্রের স্বপ্ন ধ্বংস

imranকৃষক বাবার সম্ভাবনাময় মেধাবী ছেলে ইমরান সরকার (১৮)। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল। জেএসসিতে স্কলারশিপসহ জিপিএ-৫। এসসিতেও জিপিএ-৫। ইচএসসির ফলাফলে হোঁচট খেলেও সুযোগ পেয়েছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান স্টাডিজ বিভাগে। আরও ভালো সুযোগের আশায় ভর্তি হননি সেখানে। এর মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক নারীর সঙ্গে। এখন ফেসবুকের অপব্যবহারে নষ্ট হতে চলেছে তার জীবনের সব সম্ভাবনা।

তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে নগরীর চান্দগাঁও থানায় ওই নারীর দায়ের করা মামলায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ইমরান। বুধবার রাতে তাকে বগুড়া জেলা সদরের সবুজবাগ গ্রিনল্যান্ড হাউজিং সোসাইটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

chardike-ad

গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন বলেন, ইমরান মেধাবী ছাত্র। ফেসবুকের নেশায় পড়ে সে খারাপ পথে পা বাড়িয়েছে। মামলার ‍বাদির সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলে সে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওই নারীর অশ্লীল ভিডিও সে ইউটিউবে আপলোড করেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আনার পর ইমরান কর্মকর্তাদের কাছে বারবার শুধু একটি সুযোগ দাবি করতে থাকেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে ইমরান বলেন, আমার লাইফটা নষ্ট করে দেবেন না। আমি একবার ভুল করেছি। আমাকে সংশোধনের সুযোগ দিন। আমি লেখাপড়া করে বিসিএস পাস করে আপনাদের কাছে আসব।

ইমরান গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানীগঞ্জ গ্রামের তাজউদ্দিন সরকারের ছেলে। চার ভাই দুই বোনের সংসারে ইমরান চতুর্থ। বড় ভাই ঢাকায় একটি অভিজাত হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন। মেঝ ভাই চট্টগ্রাম নগরীর সিইপিজেডে একটি কারখানায় কাজ করেন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি দুই ভাইবোন গ্রামে পড়ালেখা করেন।

সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান জানিয়েছে, গাইবান্ধার গুগা আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাসের পর মেঝ ভাই তাকে চট্টগ্রামে এনে বেপজা স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখান থেকে ২০১৬ সালে ৩ দশমিক ৮৩ পেয়ে এইএসসি পাস করেন ইমরান।

বেপজা কলেজে পড়ার সময় ইপিজেড এলাকায় মেসে থাকতেন। সেখানে বন্ধুদের ‍সঙ্গে মিলে প্রথমে ইমরান সরকার নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলেন। এক বছর আগে ‘শাহরিয়ার কাব্য’ নামে এক মডেল যুবকের ছবি ব্যবহার করে আরেকটি আইডি খুলেন। এইচএসসি পরীক্ষার পর বগুড়া সদরে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করছিলেন ইমরান।

গত বছরের নভেম্বরের দিকে ফেসবুকে ওই নারী তাকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠান। নিয়মিত তার সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে কথা হতে থাকে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটানা কথা চালিয়ে যান। প্রায় ৩৮ বছর বয়সী স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারীর কাছে ইমরান নিজের বয়স গোপন করে এবং ব্যবসা করে বলে মিথ্যা তথ্য দেয়। এতে ওই নারী তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

ইমরান সাংবাদিকদের সামনে পুলিশকে বলেন, বয়স গোপন করলেও তাকে বারবার বলেছি আমি তোমার চেয়ে অনেক ছোট। তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তুমি বুড়ি হয়ে গেছো। এতে সে রেগে গিয়ে আমার ম্যাসেঞ্জারে নিজের কয়েকটি খারাপ ছবি পাঠায়। পরে একটি অশ্লীল ভিডিও পাঠায়। আমি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করি। তবে প্রাইভেসি থাকায় সেটি কেউ দেখতে পায়নি।

সূত্রমতে, ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য প্রথম দফায় গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইমরানকে ওই নারী দুই লাখ টাকা দেন। এরপর এপ্রিলে আরও এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। এসএ পরিবহনের মাধ্যমে এসব টাকা লেনদেন হয়। প্রথম দফা দেওয়া টাকায় ইমরান বগুড়া সদরের শাহসুন্দর কলেজের অ্যাকাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে বিয়ে করে।

‘আমি বিয়ে করেছি। তবে শর্ত ছিল, সে তার বাপের বাড়ি থাকবে। আমি লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হলে তারপর সে আমার ঘরে আসবে। ’ সাংবাদিকদের সামনে পুলিশকে জানায় ইমরান।

গত রমজানের মাঝামাঝিতে ওই নারীর কাছে আবার এক লাখ টাকা দাবি করে ইমরান। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায় সে ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিও উন্মুক্ত করে দিয়ে লিংক পাঠান ওই নারীর ম্যাসেঞ্জারে। তারপর বিকাশের মাধ্যমে গত ৪ জুলাই তাকে ১০ হাজার টাকা দেন। এরপরও হুমকিধমকি অব্যাহত রাখলে ওই নারী ৯ জুলাই চান্দগাঁও থানায় গিয়ে মামলা করেন।

সূত্রমতে, এর মধ্যে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ইমরানকে ধরার জন্য ফাঁদ তৈরি করে। এস এ পরিবহনের মাধ্যমে আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠায় গত ১১ জুলাই সন্ধ্যায়। ওই টাকা নেওয়ার পর ইমরানকে অনুসরণ করে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাংলানিউজ