Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

লন্ডনের নারী ও হিজাব বাহারি

London-Hijabইংল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে মানুষ অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন এবং প্রতিনিয়ত ফ্যাশন পরিবর্তন হয়। পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে বর্তমানে হিজাব একটি ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসাবে ছড়িয়ে পড়েছে সব বয়সের নারী ও তরুণীদের মধ্যে। বিচিত্র সংস্কৃতির মানুষ এখানে বসবাস করেন বলে হিজাবের বৈচিত্র্যও অগুণতি। আগে নারীরা পর্দা করার উদ্দেশ্যে হিজাব পরতেন। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। অনেকে ফ্যাশন হিসেবে হিজাবকেই বেছে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

আমার প্রবাস জীবন অল্প কয়েকদিনের। কিন্তু একটা কসমোপলিটন সিটিতে বারো জায়গার মানুষের সঙ্গে হরহামেশা দেখা হয়ে যায়; আর তাদের পোশাকও চোখ এড়ায় না। লন্ডনে ফ্যাশন হিসেবে হিজাবের চল হওয়ার পর মোটাদাগে মূলত তিনটি ধরন দেখতে পেয়েছি- লন্ডনি, আ্যারাবিয়ান এবং আফ্রিকান।

chardike-ad

কৌতুহলবশত দেশি এবং বিদেশি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে হিজাবের ব্যাপারে কথা বলে তাদের মতামত জানলাম। এদের অনেকেই মনে করেন, শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি হিজাব পরলে নারীর ব্যক্তিত্ব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে।

দেশে থাকতে দেখতাম নারীরা হিজাব শুধু বোরকার সাথে পরতেন; সময় গড়ানোর সাথে সাথে লন্ডনে এবং দেশে অনেক নারীকেই শাড়ি, কামিজ, কুর্তা, এমনকি টপস ও জিন্সের সাথেও হিজাব পরতে দেখছি। এমনকি বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের বেশিরভাগ মেয়েরাই এখন স্কুলের ইউনিফর্মের সাথে হিজাব পরছেন। অনেকে কর্মক্ষেত্রেও হিজাব পরে যাচ্ছেন।

ইংল্যান্ড খ্রিস্টান-প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশে বিভিন্ন বয়সের মেয়ে ও নারীরা অনায়াসে হিজাব পরছেন কোনো রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই। এ সম্পর্কিত ঝামেলার কথা খুব কমই শুনতে পাই।

যারা নিয়মিত হিজাব পরেন, তারা বলছেন- শুধু পর্দা করার জন্য নয়, ত্বক ও চুলকে ধুলাবালি থেকেও রক্ষা করে হিজাব। অনেকে আবার পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে হিজাব পরেন। এমনকি নকশা করা হিজাবও। আজকাল লন্ডনে বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে হিজাবের সাজে দেখা যায়। অবশ্য সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশেও কিছু বিয়ের ছবিতে কনেকে হিজাবপরা অবস্থায় দেখেছি।

মরিশাস থেকে আসা আমার এক সহপাঠীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, কেন তুমি হিজাব বেছে নিলে? সে বললো, “হিজাবকে আমি স্টাইল হিসেবে দেখি। কারণ আমার দেশে মুসলিম নারীরা খুব একটা হিজাব পরেন না। কিন্তু লন্ডনে আসার পর দেখলাম, এখানে বেশিরভাগ নারী স্টাইল হিসেবে হিজাব ব্যবহার করছেন।” “যার কারণে আমি নিজ আগ্রহে হিজাব পরা শুরু করি। তাছাড়া লন্ডনে হিজাব পরিধানের কারণে কখনও কোন সমস্যার সম্মুখীন হইনি।”

আমি আরেকজন সহপাঠীকে একই প্রশ্ন করায় এলো ভিন্ন উত্তর। সে বললো, “আসলে আমি হিজাব পরি আমার স্কিনকে ধুলোবালি ও সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করতে। মাথার ত্বকে সমস্যা থাকার কারণে আমি হিজাব পরতে শুরু করি।”

এরপর আমার এক বাঙালি সহপাঠীকে একই প্রশ্ন করার পর সে বললো, “আমি হিজাব পরি শুধু পরিবারের কারণে। আমার মা ও বোন দুইজনই হিজাব পরেন।” “তবে পরতে খারাপ তো লাগেই না, বরং ভালো লাগে এই ভেবে যে, এদেশে হিজাব পরার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া হিজাব পরলে যে কোনো স্টাইল করা যাবে না তা কিন্তু ঠিক নয়, বরং এতো বাহারি ডিজাইন আমার মনে হয় না আর কোন দেশে আছে।”

আরও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছি, তারা হিজাবকে কোনও ধর্মীয় পোশাক মনে করেন না। বরং নিজের সুবিধায় এটি পরেন বলে জানালেন। মাঝে মাঝে আমি নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি বাহারি রকমের হিজাব স্টাইল দেখে। বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে লন্ডনের বাজারে সুতি, সিল্ক, জর্জেট, নেট ও মখমলসহ বিভিন্ন ধরনের হিজাব বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। হিজাবের আনুষঙ্গিক সজ্জা উপকরণ হিসেবে ইদানিং বিভিন্ন ধরনের পাথর বসানো ক্লিপ ও পিন ব্যবহার হচ্ছে।

লন্ডনে হিজাবের দাম খুব বেশি নয়; দুই থেকে পাঁচ পাউন্ডের মধ্যেই নকশা করা হিজাব কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও মাঝে মাঝে হিজাব বিক্রি করতে বিক্রেতারা দেন বিশেষ মূল্যহ্রাসের অফার।

লেখক: শাফিনেওয়াজ শিপু, লন্ডন থেকে
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com