Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নো-ম্যানস ল্যান্ডে শতাধিক শিশুর জন্ম

suraiya-rohingaকোনোরকম চিকিৎসা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নো-ম্যানস ল্যান্ডে শতাধিক নবজাতকের জন্ম হয়েছে। যাদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় বলে জানা গেছে।

গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরএসএ)। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ ৮৯ জন মারা যায় বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য। এরপরই রাজ্যটিতে শুরু হয় সেনা অভিযান।

chardike-ad

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেনা অভিযানে রাখাইনে অন্তত তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আর প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় তিন লাখের অধিক রোহিঙ্গা। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

২৫ বছর বয়সী সুরাইয়া সুলতানা। ২৬ আগস্ট আগত সন্তানের জীবন বাঁচতে রাখাইনের নিজ বসতভিটা ছেড়ে এক কাপাড়ে বেরিয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী সেই দিন তাদের গ্রামের হামলা চালিয়ে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। বাড়ির পর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সক্ষম পুরুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। বুলেটের আঘাত থেকে রক্ষা পায়নি নিষ্পাপ শিশুরাও।

সুরাইয়ার ভাষায়, ওই দিন সেনাবাহিনী ও মগ সন্ত্রাসীদের হাতে সম্ভ্রম হারান তার গ্রামের শতাধিক নারী ও কিশোরী। দু’দিন পাহাড়-জঙ্গলের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সুরাইয়া পৌঁছান বাংলাদেশ সীমান্তের জুম্মন খালি বেড়িবাঁধ এলাকার নো-ম্যানস ল্যান্ডে। সেখানে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) তাদের বাংলাদেশ প্রবেশে বাধা দেয়।

সেখানেই সুরাইয়ার প্রসবব্যথা ওঠে। একদিকে প্রসবব্যথা, অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে অঝোরে বৃষ্টি। নো-ম্যানস ল্যান্ডের ওই স্থানটিতে আশ্রয় নেয়া শত শত নারী ও শিশুর দুর্ভোগের যেন কোনা সীমা নেই।

অবশেষে দয়া হয় কর্তব্যরত বিজিবি কর্মকর্তার। সুরাইয়া’সহ দুর্ভাগা কয়েকজন মহিলাকে নিজেদের বোটে আশ্রয় দেন ওই কর্মকর্তা। ওই বোটের মধ্যেই প্রচণ্ড প্রসববেদনা শুরু হলে কয়েকজন মহিলা শাড়ি দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করেন। ভারী বৃষ্টির মধ্যে বোটের মধ্যেই জন্ম নেয় সুরাইয়ার সন্তান। নবজাতকসহ মায়ের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় নিকটস্থ নয়াপাড়া ক্যাম্পে। সেখানে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

গতকাল (শনিবার) নয়াপাড়ার শরণার্থী ওই ক্যাম্পে গিয়ে মা সু্রাইয়া ও তার শিশুসন্তান আয়েশার খোঁজ পাওয়া যায়। ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়ক মো. মমিনুল হক বলেন, গত ২৬ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত এখানে শতাধিক নবজাতক ও তাদের মায়েদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। যাদের জন্ম হয়েছে নো-ম্যানস ল্যান্ডে।

তিনি আরও বলেন, এখানে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের অধিকাংশের শারীরিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

গর্ভের সন্তান নিয়ে মায়ের চরম দুশ্চিন্তা, পাহাড়-জঙ্গল, নদী-খাল-বিলসহ কন্টকময় পথের ধকল, সঙ্গে অপুষ্টি; সবমিলিয়ে এক প্রসূতি মাকে নরকময় সময় পার করতে হয়েছে। তারা যে বেঁচে আছে এটাই আল্লাহ’র অশেষ রহমত- যোগ করেন তিনি।