Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বসেরা এক শিক্ষকের গল্প

maggie-macdonnellযতদূর চোখ যায় শুধু বরফ আর বরফ। এর ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে শিশুরা। তারা যাচ্ছে ম্যাগি ম্যাকডোন্যাল এর স্কুলে। তাঁর স্কুলে শুধু পড়ালেখাই করানো হয় না, এর সঙ্গে থাকে জীবন চালানোর বিভিন্ন শিক্ষা।

একজন শিক্ষক হিসেবে ম্যাগি লেখাপড়াটাকে একটু অন্যভাবে দেখেন। তাঁর স্কুলে রয়েছে শরীরচর্চা, রান্না, সাজ-গোজের ব্যবস্থা। শেখানো হয় তাঁবু খাটানোর কৌশল। সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরা হয় তাঁর স্কুলে। আর সব প্রচলিত স্কুল থেকে ম্যাগির স্কুলটি একটু আলাদাই বটে।

chardike-ad

এ বছরের মাঝামাঝি ম্যাগি ম্যাকডোন্যাল “গ্লোবাল টিচার প্রাইজ” নিজের করে “বিশ্বের সেরা শিক্ষক” হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন। বিভিন্ন দেশে দরিদ্র শিশুদের পড়ালেখার জন্যে কাজ করেন এমন শিক্ষকদের খোঁজ নিয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ভ্যারকি ফাউন্ডেশন এ বছর ম্যাগিকে এ পুরস্কারের জন্যে নির্বাচিত করে।

কানাডার বরফ ঢাকা কিউবেকের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত নোভা স্কটিয়া গ্রামে দরিদ্র আদিবাসীদের ভেতর শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছেন ম্যাগি। আর সব স্কুলের মতো চার দেয়ালে ঢাকা নয় ম্যাগির স্কুল। শুধু কি তাই, শিশুদের বরফ ভেঙ্গে বেশ কয়েক মাইল পাড়ি দিতে হয় সেই স্কুলে আসার জন্যে।

দেশটির মিকমাক আদিবাসীদের জন্য ম্যাগির দরদ তাঁর ছোট বেলা থেকেই। সংরক্ষিত এলাকায় বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বলেন, ম্যাগিদের পারিবারিক জমিতেই তারা কাজ করে খান।

সেসব দিনের কথা স্মরণ করে ম্যাগি বলেন, “একদিন আমি বাবার কাছে যাই। বলি, দেখ আমাদের জমিতে শিকার করছে মিকমাক লোকেরা।”

“উত্তরে বাবা বলেন, ভুলে যাচ্ছ কেন এটি তাদেরই জমি। তারা এখানে শিকার করবে, মাছ ধরবে, কাজ করবে – তাদের যা খুশি তাই করবে। বরং, আমরাই তাদের জমিতে বসবাস করছি,” যোগ করেন ম্যাগি।

ছোটবেলায় বাবার সে কথাগুলো বেশ প্রভাব ফেলেছিলো ম্যাগির মনে। আর তাঁর ভাবনাগুলোকে সাদরে গ্রহণ করে নেয় সে অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীরা।

কানাডার এই দুর্গম এলাকায় তরুণদের চাকরির সুযোগ নেই বললেই চলে। হতাশায় মাদক সেবনের পাশাপাশি আত্মহত্যার পথও বেছে নেয় অনেকেই। পুরস্কার নেওয়ার মঞ্চে এমন এক তরুণের করুণ মৃত্যুর গল্প বলেন ম্যাগি।

তবে, এ নারীর সফলতার গল্প বলতে গিয়ে ভ্যারকি ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা সানি ভ্যারকি বলেন, “যেখানে কোন রাস্তা নেই, আবহাওয়া বৈরী এবং যে জনগোষ্ঠীর মানুষেরা শত শত বছরের বঞ্চনার শিকার, তাদের জন্যে ম্যাগি যা করছেন তা ‘সুপারহিউম্যান’ এর কাজ।”

তিনি আরও বলেন, “এই এলাকায় কোন শিক্ষক এলে তারা ছয় মাসের মধ্যে এখান থেকে নিজেদের বদলি করিয়ে নেন। আর ম্যাগি ছয় বছর থেকে এখানে কাজ করে যাচ্ছেন।”

ম্যাগির এই প্রচেষ্টায় আজ সেখানে স্বপ্ন দেখছে শত শত আদিবাসী শিক্ষার্থী।

তথ্যসূত্র: বিবিসি