সাজের আকাশে বাকাঁ চাঁদ নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। আসে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বড় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা । এই দিনে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হই এক মহা মিলনে। কিন্তু আমরা যারা প্রবাসে ব্যস্ত জীবনযাপন করি তাদের ঈদ কেমন কাটে? অনেকটাই অম্ল-মধুর! কাছের মানুষগুলো কাছে না থাকাই নিরস দিন কাটাতে হয়।
কোরিয়াতে ঈদ একটু অন্য রকম। এখানে মুসলিমদের সংখ্যা খুবই কম। তাই এখানে ঈদে সরকারী ছুটি থাকে না। ছুটির ব্যবস্থা করতে হয় নতুবা কাজেই নিমগ্ন থাকতে হয় সারাদিন। রাজ্যের মন খারাপ করা ব্যাপার।
কোরিয়াতে প্রবাস জীবনে এসে প্রথম ঈদের ঘটনা। রোজা প্রায় শেষ, ঈদের আর দু-একদিন বাকী। আমরা রুমমেটরা মিলে ঠিক করলাম অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মসজিদে যাব এবং ঈদের নামাজ পড়বো। কিন্তু বিধি বাম, অফিস থেকে ছুটি মঞ্জুর হয়নি।
প্রবাদ আছে না “ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়” তখন সেই উপায় খুজতে শুরু করলাম। আমরা ঠিকই ঈদের নামাজ পড়তে চলে গেলাম বাংলাদেশি কমিউনিটির মসজিদে। ভাবছেন কিভাবে? নাইট সিফট ডিউটি সকাল আটটায় শেষ করে, তড়িঘড়ি করে প্রস্তুতি নিয়ে ছুটলাম মসজিদে।
উঠলাম বাসে। সারাশরীরে ক্লান্তি। এসি বাসে বসে প্রশান্তির বাতাসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কে জানে? সাথে থাকা ফেরদৌস আলম ভাই না থাকলে হয়ত ঈদের নামাজ গাড়িতেই শেষ হয়ে যেত!
যথা সময়ে বাস এসে হাজির হলো আমাদের গন্তব্যে। মসজিদে প্রবেশ করেই অবাক হলাম প্রচুর মুসল্লির সমাগম। দেখেই মনটা ভরে গেলো। বাংলাদেশি কমিউনিটির মসজিদ হওয়াতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি হলেও পাকিস্তান, উজবেকস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম ভাইদের সংখ্যা ও কম নয়। তাই ইমামকে হতে হয় আন্তজার্তিক মানের এবং জানতে হয় নানান দেশের নানান ভাষা। উপভোগ করলাম তাঁর ঈদের বয়ান এবং খুতবা।
নামাজ শেষে ঘটলো আসল ঘটনা! দূর থেকে দেখলাম এক পরিচিত মুখ। কাছে গিয়ে বিস্ফোরিত চোখে নিশ্চিত হয়ে কোলাকুলি করলাম এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে। যার সাথে দেথা হল প্রায় ১০ বছর পর এই দূর প্রবাসে!
তারপর সোজা বাংলাদেশি রেষ্টুরেন্টে। রেষ্টুরেন্টে বসতেই চলে এল সেমাই, মিষ্টি আর মেনু! কিরে ভাই! আমি তো ফরমায়েশই দেই নাই। সেমাই, মিষ্টি কেন? রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী বললেন- সেমাই, মিষ্টি ছাড়া ঈদ কি হয়, বলেন? তাই এটা আপনাদের জন্য আজ সার্ভিস। আশা করি কোরিয়াতে বসবাসকারী সবাই ইতিমধ্যে ‘সার্ভিস’ শব্দের বিশেষ অর্থের সাথে পরিচিত হয়েছেন। অতঃপর পোলাও, মাংস ও খিচুড়ি খেয়ে দেশের খাবারের স্বাদ নিই।
তারপরও আপনজন থেকে দূরে থাকা নিয়ে মন ভীষণ খারাপ হয়! ফোনে দেশের সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, হাসিমুখে মেনে নেই বাস্তবতাকে। হয়তোবা মাও আচল ভিজিয়েছেন অশ্রু জলে ছেলেকে স্মরণ করে।
ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক দেশ বিদেশে সব জায়গায়। ত্যাগ এর মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদ উল আযহা সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি আর কল্যাণের বার্তা। ঈদের মতো আনন্দময় হোক প্রতিটি দিন। ঈদ মোবারক।
লেখক- সোহেল রেদোয়ান