Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৮২ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট

জল্লাবুকদোর ওমেন’স সেকেন্ডারি স্কুল আর দশটা সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার স্বাভাবিক বয়সটা পেছনে ফেলে এসেছেন অনেক আগে। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি কিন্তু ন্যূনতম শিক্ষার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিটুকু পেতে আগ্রহী এমন নারীদের জন্যই এ প্রতিষ্ঠান। ব্যাতিক্রমী এ প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ নিয়ে বের হয়েছেন প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ভদ্রমহিলাটির নাম ও জম নু। ৮২ বছর বয়সী এই গ্র্যাজুয়েট তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সহপাঠীর তুলনায় ৫২ বছরের বড়। জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষার সনদ পাওয়া জমের কাছে এই স্বীকৃতি আর দশজনের চেয়ে অনেক বেশী অর্থবহ। “পড়াশুনা শেষ করতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে অনেক পুড়িয়েছে, আজ শেষপর্যন্ত আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি” বলছিলেন ও।

chardike-ad

অবস্থাসম্পন্ন পরিবারেই জন্ম হয়েছিল ও জমের। বিত্ত-বৈভবের মাঝে শৈশবটাও তাঁর বেশ ভালোই কেটেছে। কিন্তু সুখ খুব বেশীদিন স্থায়ী হয় নি। জাপানী ঔপনিবেশিক আমলে ও কোরিয়া যুদ্ধের সময় তাঁর তিন ভাইকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করানো হয়। এক ভাই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে চীন চলে যান। অল্প ক’দিন বাদেই রোগে ভুগে মারা যান বাবা।

কোরিয়া যখন স্বাধীনতা ফিরে পায় তখন জমের বয়স ১৫।

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা তাঁদের পরিবারে কোন পরিবর্তন আনে নি। পরিবার বলতে জম আর তাঁর মা। জমের ভাষায়, “কিছুই বদলায় নি, জীবন আগের মতোই কঠিন ছিল। আমার যে কোন উপায়ে রোজগার করাটা জরুরী হয়ে পড়েছিল।”

ফলে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে কিশোরী জম কাজ নেন একটি গার্মেন্টস কারখানায়। এমনকি বিয়ের পরও স্বামী-সন্তানদের ভরণপোষণ যোগাতে তাঁকে সেখানে কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে।

তবে পড়াশুনার আগ্রহটা তাঁর কখনই মরে যায় নি। ২০০৮ সালে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে তাই নির্দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এই স্কুলে ভর্তি হতে। কোন লজ্জা কিংবা জড়তা তো নয়ই, ছয় বছরের কোর্সটি জম শেষ করেছেন গর্ব আর তৃপ্তির সাথে।

“তাঁর আচার আচরণ আর দশজনের থেকে অনেক ভালো ছিল। গত বছর একটা অস্ত্রোপচারের জন্য কিছুদিন সে বিশ্রামে ছিল, এছাড়া আর কখনই সে ক্লাস ফাঁকি দিতো না।” জমের একজন শিক্ষক ছাত্রীর প্রশংসা করছিলেন এভাবেই।

বিদ্যার্জনের যুদ্ধে জম এখানেই ইস্তফা দিতে চান না। ইতোমধ্যেই তিনি স্থানীয় একটি কলেজে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক পড়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন। “আমি নিশ্চিত না আমার মতো বুড়িকে ওরা নেবে কিনা,” হাসতে হাসতে বলছিলেন জম, “কিন্তু আমি আরও পড়তে চাই, পড়াশুনা অনেক মজার!”