পরীক্ষা শেষে তিনদিন পরই নিজ দেশে যেতে চেয়েছিলেন ঢাকার ভাটারায় অবস্থিত পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের নেপালি ছাত্রী বিনিশা শাহ। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও ছিল তার। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ হোস্টেলে নিজের কক্ষে পাওয়া গেছে তার ঝুলন্ত মরদেহ।
এর আগে সকালে তিনি র্টাম-২ পরীক্ষা দিয়ে নিজের কক্ষে ফেরেন। ২১ বছর বয়সী বিনিশা পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের ২২তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার এ পরীক্ষা দিয়ে পাঁচ মাস পর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তার নেপাল যাওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিশা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে অসুদপায় অবলম্বন করায় শিক্ষক তাকে গালমন্দ করেছিলেন। অভিমানে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। সিআইডির ক্রাইমসিনও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। ঢাকায় নেপাল দূতাবাসের কর্মকর্তারাও আসেন ঘটনাস্থলে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মেলেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একাধিক ফোনে যোগাযোগ করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়; কলেজের অধ্যক্ষ বাইরে রয়েছেন। এ বিষয়ে অন্য কারো পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়।
বিনিশার এমন অসময়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠীরা। ঘটনা জানার পর তারা কলেজের হোস্টেলে ছুটে যান। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
হোস্টেলে বিনিশার সঙ্গে থাকেন নেপালের আরেক শিক্ষার্থী রোকসা। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের পরীক্ষা ছিল। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার অন্তত আধাঘন্টা আগেই শিক্ষকরা বিনিশাকে কেন্দ্র থেকে অফিসে ডেকে নেন। এরপর কেন্দ্রে ফিরলেও পরীক্ষা না দিয়ে বেরিয়ে যান বিনিশা। পরীক্ষা শেষে রোকসা কক্ষে ফিরে দেখেন ভেতর থেকে দরজা আটকানো। ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে সাড়া মিলছিল না। তখন হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিকল্প চাবি নিয়ে দরজা খুলতেই বিনিশাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে চিৎকার করে ওঠেন তিনি। এরপর অন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে আসেন।
রোকসা বলেন, কখনো বিনিশার আচরণে হতাশ মনে হয়নি। তিনি যে আত্মহত্যা করতে পারেন তা কল্পনাও করা যায় না। তার বাড়ি নেপালের বিরাটনগর শহরে। বিনিশার আরেক সহপাঠী আফসারা বলেন, টার্ম-২ এ মাত্র একটি পরীক্ষা বাকি ছিল। পরীক্ষা শেষে ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার তাদের একসঙ্গে নেপালে যাওয়ার কথা ছিল।
পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবির জানান, বিনিশার কাছে শিক্ষক নকল পেয়েছিলেন। এরপর তাকে খাতা সহকারে অফিস কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। কলেজের অধ্যক্ষ না থাকায় তাকে বহিস্কার না করে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে নকল করা প্রশ্নের উত্তর কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে বিনিশা পরীক্ষা না দিয়েই হোস্টেল কক্ষে চলে যান। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, সব ধরনের আলামতে মনে হয়েছে নেপালের ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। এরপরও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে তার মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ রাজশাহীতে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আত্মহত্যা করেন মালদ্বীপের ছাত্রী রাউধা আতিফ। তিনি এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেল হিসেবেও রাউধার ব্যাপক পরিচিতি ছিল।
সৌজন্যে: সমকাল