সিউল, ২২ অক্টোবর ২০১৩:
বিশ্বে সেই আদিকাল থেকে প্রচলিত আছে হাজারো কুসংস্কার, সেখান থেকেই সবচাইতে প্রচলিত এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে সেরা কুসংস্কারগুলো তুলে ধরা হলো এখানে।
১০. কাঁচা চাল খাওয়ালে বিস্ফোরিত হয় কবুতর!
পশ্চিমা দেশগুলোতে বিয়ের আসরে আগত অতিথিদের পাখি, বিশেষ করে কবুতরদের কাঁচা চাল খাওয়াতে খুব করে নিষেধ করা দেয়া হয়। কারণ হিসেবে বলে দেয়া হয় যে এতে করে নাকি পাখিটি বোমার মতো করে ফেটে যেতে পারে! অর্থাৎ চাল বা ভুট্টার দানা কাঁচা কাঁচা ভাজতে গেলে ফুটফাট আওয়াজ করে সেগুলো কড়াইয়ের উপর যেমন করে লাফাতে থাকে, পাখিগুলোর পেটে যদি ওই কাঁচা দানাগুলো পড়ে যায়, তাহলে পাখিগুলোকে রান্না করার সময় পাখিগুলোও কড়াইয়ের উপর ঠুসঠাস শব্দে নাচতে নাচতে ফেটে যেতে পারে!
কিন্তু কাঁচা চাল খেলে পাখি রান্নার সময় ফেটে যাওয়ার নজির বিশ্বের কোথাও তো নেইই, এমনকি কোনো বিয়ের নিয়মকানুনের বইতেও এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং পাখিরা শীতকালে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ক্ষেত থেকে চাল নিয়ে খেতেই পছন্দ করে।
৯. নেপোলিয়ন বেঁটে ছিলেন?
লম্বা ও বিশালদেহী সৈন্যদের মাঝে নেপোলিয়ন যখন নেতৃত্ব দিতেন তখন নাকি তাকে অপেক্ষাকৃত কুঁজো দেখাত, অন্তত নেপোলিয়নকে নিয়ে আঁকা বিভিন্ন ছবি দেখে নাকি আপনার এমনটাই মনে হবে! আর এর জন্য নাকি নেপোলিয়ন হীনম্মন্যতাতেও ভুগতেন।
তাই সারাবিশ্ব নেপোলিয়ন বোনাপার্ট হিসেবে একনামে চিনলেও সৈনিকদের মাঝে নাকি তিনি পরিচিত ছিলেন ‘লে পেতিত ক্যাপোরাল’ বা খাটোদের নেতা নামে। কিন্তু আদতে নেপোলিয়নের উচ্চতা ছিল অন্তত ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। আর তার এই নামকরণ হয়েছিলো মূলত নম্রতা আর বিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে।
৮. মাথা ন্যাড়া করলে কি চুল বাড়ে?
অনেকেই বিশ্বাস করেন মাথা ন্যাড়া করলে নাকি চুল পরেরবার গজানোর সময় আরো ঘন, কালো আর মোটা হয়ে ফেরত আসে, আর লম্বাও হয় খুব তাড়াতাড়ি! কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত যে আসলে এগুলোর কিছুই ঘটে না।
প্রকৃত সত্য হলো চুলের গোড়ার একটুখানি অংশ বাদে বাকি অংশটুকু পুরোটাই প্রাণহীন। তাই প্রাণহীন চুলের বৃদ্ধি সম্ভব না বলে চুল কেটে লাভ নেই। কারণ চুল লম্বা হয় গোড়া থেকে। আর নতুন চুল গজানোর পরে সূর্যের আলো পড়ে তাকে কিছুদিনের জন্য ঘন, কালো বা মোটা দেখালেও বিভ্রান্তি ছাড়া আদতে তা কিছুই নয়।
৭. ডাইনিদের নাকি জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো প্রাচীন আমলে?
১৬৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঔপনিবেশিক ম্যাসাচুসেট্সে ‘ডাকিনীবিদ্যা’ সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করার পরে প্রায় দেড়শ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের মধ্য থেকে অন্তত ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো এরকম একটি ধারণা খুব জনপ্রিয় হলেও আসলে ঘটনা অন্যরকম।
ইউরোপিয় কিছু আইনে ‘ডাকিনীবিদ্যা’ চর্চাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলাকে উৎসাহিত করা হলেও ম্যাসাচুসেট্সের আইনে তা নিষিদ্ধ ছিল।
৬. মধ্যাকর্ষণহীন মহাকাশ?
মহাকাশে মহাকাশচারীদের ভরশূন্য দেখায় বলে মহাকাশ মাধ্যাকর্ষণহীন, এমন একটি ধারণা কমবেশি আমাদের সবার মধ্যেই প্রচলিত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা নয়। মহাকাশে পৃথিবীর চাইতে মধ্যাকর্ষণ অনেক কম হলেও তা একেই ভরশূন্য হওয়ার কথা ভিত্তিহীন।
আসল ব্যাপার হলো, কি পৃথিবী, কি চাঁদ, কি সূর্য- সবকিছুতেই মধ্যাকর্ষণ আছে, কিন্তু তা কোথাও কম কোথাও বেশি। আর এ কারণেই যেমন আমাদের শরীর পৃথিবীর সঙ্গে লেগে থাকছে, ঠিক তেমনি সবগুলো গ্রহই নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। আর মহাকাশচারীদের মহাকাশে ভরশূন্য মনে হওয়ার কারণ হলো মহাকাশে থাকার সময় মহাকাশযান যতোটা হালকাভাবে তাদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রয়োগ করে টানতে থাকে, তার থেকে অনেক বেশি টানে পৃথিবী।
৫. মহাকাশ থেকে দেখা যায় চীনের মহাপ্রাচীর
চীনের মহাপ্রাচীর বিশ্বের সব স্থাপত্যকলার মধ্যে অন্যতম। রিচার্ড হ্যালিবার্টন নামের একজন ইতিহাসবিদ দাবি করেছিলেন যে এই মহাপ্রাচীর নাকি এতটাই বিশাল এবং আশ্চর্যজনক যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়! অবশ্য নাসা’র মহাকাশযান এই দাবিকে ভুল প্রমাণিত করেছে। কিন্তু তারপরেও মানুষের মধ্যে এখনো একটি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে যে পৃথিবীর কাছাকাছিতে অবস্থানরত একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ থেকে আসলেই এই স্থাপনাটি দেখা যায়।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর সবচাইতে কাছের কক্ষপথ যেটা পৃথিবী থেকে মাত্র ১৮০ মাইল দূরে অবস্থিত, সেখান থেকেও যথেষ্ট লম্বা হওয়ার পরেও চীনের মহাপ্রাচীরের রংকে এর আশেপাশের অন্যান্য প্রাকৃতিক রং থেকে আলাদা করে বোঝা যায় না। বরং বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দর আর হাইওয়ে সড়ক কিছুটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
৩. টমাস আলভা এডিসন বৈদ্যুতিক বাতির জনক
টমাস আলভা এডিসন বৈত্যুতিক বাতির জনক একথা যদিও আমরা সবাই জানি, কিন্তু আসলে এই তথ্য সর্বৈব ভুল। বৃটিশ নাগরিক হামফ্রি ডেভি ১৮০৯ সালে ‘আর্ক ল্যাম্প’ নামের একটি বাতি তৈরীর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়েছিলেন।
তার এক দশক পরে ওয়ারেন দ্যে লা রু প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ কিন্তু পরীক্ষামূলক বাতি তৈরি করেন। তারপর ১৮৪০ সালে উইলিয়াম রবার্ট গ্রোভ একটি আস্ত ঘর আলোকিত করার মতো বাতি আবিষ্কার করেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলো যে, এদের সবারই আবিষ্কার ছিলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং বাতিগুলো মোটেই টেকসই ছিল না। আট জন বিজ্ঞানী প্রাথমিকভাবে এই বাতি আবিষ্কার করার পরে এবং তিন জন তাদের আবিষ্কার পেটেন্ট করার পরে অবশেষে তাদের প্রত্যেকের গবেষণা থেকে তথ্য, উপাত্ত ও সাহায্য নিয়ে এডিসন একটি দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই এবং তুলনামূলক সস্তা বাতি আবিষ্কার করেন। যদিও এরপরের অংশ ইতিহাস এডিসনই তৈরি করেছেন, কিন্তু বাতি আবিষ্কারের পথ তিনি দেখাননি।
২. মানুষের মগজের মাত্র ১০% ব্যবহারযোগ্য
১৮০০ সালে বিজ্ঞনীদের মধ্যে একজন মানুষের মগজ কতটুকু ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে বিপুল তর্ক-বিতর্কের পর উইলিয়াম জেমস এক প্রবন্ধে বলেন যে মানুষের মগজের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ তার পুরো জীবদ্দশায় ব্যবহৃত হয়, আর গুজব ছড়িয়ে যায় যে এই অংশটি সম্পূর্ণ মগজের মাত্র ১০%। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য মগজের ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট অংশ কাজ করে।
১. পুরুষরা প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার যৌন বিষয়ক চিন্তা করেন
যদিও বলা হয়ে থাকে যে অন্তত প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার করে পুরুষদের মনে যৌন সংসর্গের খেয়াল আসে, কিন্তু এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অজস্র গবেষণার পরে বলছেন যে এই বিষয়টির পক্ষে কোনোরকম তথ্য ও বাস্তবতা নেই।
এ ব্যাপারে গবেষক আলফ্রেড কিনজির দিকে অনেকেই আঙুল তুললেও আসলে তিনি এমন কিছু বলেননি। তিনি তার একটি গবেষণায় বলেছিলেন যে প্রায় ৫৪ শতাংশ পুরুষ দিনে কয়েকবার এ ধরনের চিন্তা করে থাকেন। তাই যৌন সংসর্গের বিষয়ে নারী, নাকি পুরুষ- কারা বেশি আগ্রহী এ বিষয়ে যদিও বা তর্ক করা যেতেও পারে, কিন্তু প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার পুরুষদের যৌন বিষয়ে চিন্তা একেবারেই ভাওতা। যেন পুরুষদের এছাড়া আর কোনো কাজ নেই! সূত্র: নতুনবার্তা