Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্যামসাংয়ের চাকরিতে আগ্রহী অধিকাংশ দক্ষিণ কোরিয়ান

সিউল, ১১ নভেম্বর ২০১৩:

দক্ষিণ কোরিয়ানদের কাছে এখন স্যামসাংয়ে চাকরি করাটা স্বপ্নের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। দেশটির চাকরি প্রত্যাশীদের অধিকাংশই এখন ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা এ কোম্পানিতে ঢুকতে চাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে স্যামসাংয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও বাজার বৃদ্ধির কারণে চাকরির বাজারে কোম্পানিটির চাহিদা এতটা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

chardike-ad

Samsung-Logoদক্ষিণ কোরিয়ার বন্দর নগরী বুসানের একটি কলেজের ছাত্ররা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় তাদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা করছিল। তাদের প্রায় সবাই পড়ালেখা শেষে স্যামসাংয়ে চাকরি করবে বলে মত প্রকাশ করে। এ ধরনের আরো অনেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান চাকরিজীবীরা এখন স্যামসাংয়ে চাকরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে বিশ্ববাজারে এখন দেশটির এ কোম্পানির চাহিদা অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি ভারতে যেসব কোম্পানি স্মার্টফোন বিক্রি করে তাদের মধ্যে বাজার দখলে স্যামসাং শীর্ষস্থান অর্জন করে। এছাড়া আরো অনেক দেশে কোম্পানিটির পণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এতে বিশ্বজুড়ে এর প্রচার ও প্রসার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ ধরনের সুনামের কারণেই চাকরি প্রত্যাশীরা এখন চাকরির জন্য স্যামসাংয়ের প্রতি ঝুঁকছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।

গ্রাহকদের পাশাপাশি কর্মীদের জন্যও কোম্পানিটির ব্যবহার অনেকটাই ইতিবাচক। ভালো বেতন-ভাতার পাশাপাশি স্যামসাং তাদের কর্মীদের উন্নত প্রায় সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করে। দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকাংশ মানুষ কনফুসিয়াসের অনুসারী। স্যামসাংয়ে চাকরি করলে কর্মীরা ভালো কনফুসীয় পরিবারে বিয়ে করতে পারেন বলেও বিশ্বাস অনেকের।

স্যামসাং ও হুন্দাইয়ের মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানি বছরে দুবার কর্মী নিয়োগ দেয়। এ কারণে কোম্পানিটিতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেক গুণ। স্যামসাংয়ে বর্তমান ও সাবেক অনেক কর্মীর ছেলেমেয়েরাও কোম্পানিটির চাকরি প্রত্যাশী। শিন সিয়ং হুয়ান নামের একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘আমি সকাল ১০টা থেকে এখানে বসে আছি। চাকরির জন্য ভাইভা দিতে হবে রাত ৮টায়। তাই আমি এসে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ হুয়ানের পিতা স্যামসাংয়ের একজন বর্তমান কর্মী।

কোম্পানিটিতে চাকরিরত মা-বাবারাও তাদের সন্তানদের জন্য এখানে চাকরি করাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ দেশী কোম্পানি হওয়ায় তারা বিভিন্ন সুবিধা পান। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে স্যামসাংয়ের গ্রহণযোগ্যতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মীদের সামাজিক মর্যাদাও বেড়ে যায় অনেক গুণ।

কোম্পানিটি সম্প্রতি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমানে চাকরির জন্য এক লাখ প্রার্থী আবেদন করলেও তারা মাত্র ৫ হাজার ৫০০ কর্মী নিয়োগ দেবে বলে জানায়। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি করেন হুয়ান। তিনি কোম্পানিটিতে চাকরির জন্য প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও এখন ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার মতে, অন্য যেকোনো কোম্পানিতে চাকরি করার চেয়ে কয়েক দিন অপেক্ষা করে স্যামসাংয়ে চাকরি পাওয়াটা অনেক ভালো।

দেশটির শ্রমিক ইউনিয়ন কোরিয়া লেবার ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক হুর জাই জুন বলেন, বহুজাতিক, আন্তর্জাতিকভাবে স্থিতিশীল ও গ্রহণযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাটা কর্মীদের জন্য যেমন নিরাপদ, অভিভাবকদের জন্যও তা স্বস্তিদায়ক। এ কারণে স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ঝুঁকছে অনেক চাকরি প্রত্যাশী।

তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকরি পাওয়াটাও অনেক কঠিন বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা। দ্য ফেডারেশন অব কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রির মতে, কোম্পানিগুলোয় চাকরি পেতে অনেক প্রতিযোগিতা করতে হয়। দেশটির শীর্ষস্থানীয় ৩০টি গ্রুপ অব কোম্পানি রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশটির মোট কর্মীসংখ্যার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো খুব বেছে কর্মী নিয়োগ দেয়। এ কারণে তাদের কর্মীসংখ্যাও খুব বেশি হয় না। তাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করাটাও অনেক কঠিন ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।

তবে স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পেলে একদিকে যেমন চাকরি প্রত্যাশীদের ক্যারিয়ার নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হয় না, অন্যদিকে সামাজিক মর্যাদাও কয়েক ধাপ বৃদ্ধি পায়। সূত্রঃ বণিকবার্তা।