আফগানিস্তানে যুদ্ধ আর সংঘাতের জের ধরে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বহু মানুষের জীবন। জীবন যেমন হারিয়েছেন অনেকে, তেমনি অনেকে বেচে থেকেও জীবন্মৃত। এদের অনেকে মানসিক অসুস্থ হয়ে রীতিমত বন্দী জীবন কাটাচ্ছে। সেখানে মিলছেনা চিকিৎসাও।
মানসিক অসুস্থদের রাখা হয় এমন একটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন বিবিসি সংবাদদাতা। সেখানই তিনি খুঁজে পান আলী নামে একজনকে, যিনি কার্যত সবসময়ই সেখানে বন্দীই থাকেন।
আলী নিজেই জানান, “আমার অসুস্থতা সহিংসতাকে জাগিয়ে তোলে। এই সমস্যাটা হয় আমার মাথায়। তারা এখানে আমাকে আটকে রেখেছে তাই আমি আর কারও ওপর চড়াও হতে পারিনা”।
আলী আসলে সিজোফ্রেনিয়া সহ নানা ধরনের মানসিক রোগে ভুগছে। তাকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে একটি আলাদা রুমে আটকে রাখা হয়েছে। এটি আফগানিস্তানের একমাত্র সাইকিয়াট্রিক ইউনিট। এখানকার রোগীদের অনেকেই খুনের দায়ে অভিযুক্ত, সাবেক সন্ত্রাসী কিংবা আগে তারা জঙ্গি ছিলো।
এখন এসব রোগীদের দেখভালের জন্য আছেন ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী আর তিনশ লোকের জন্য আছে মাত্র একজন মনো চিকিৎসক। এর মধ্যে আলীকেই সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যেই একজন নিরাপত্তা রক্ষীর চোখ তুলে নিয়েছে সে আর আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে আরও কয়েকজন রোগীর ।
অনেক সময় তাকে ছাদে নিয়ে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। লোকজন দেখলে সেখান থেকেই কথা বলে আলী। “এটা খুব একাকী করে দেয় কিন্তু আমাকে মানতেই হবে। অন্য কেউ এখানে আসলে আমরা মারামারি করি। মারামারি শেষ হয়ে গেছে আমার ভয় লাগে”। এখানে থাকা অনেক রোগীরই আসলে স্বজন বলতে কেউ নেই। যুদ্ধ আর দারিদ্র্যতার কারণে তাদের অনেকেই অন্য দেশে অভিবাসী হয়েছে।
তাদের সাথে এখন আর যোগাযোগও করা যাচ্ছেনা। আবার অনেকে তাদের প্রিয়জনকে দেখেও চিনতে পারেনা। আলী এখানে আটকে আছে প্রায় ১৪ বছর ধরে। কখনো তার কক্ষের জানালার পাশে দাড়িয়ে কখনো ছাদে দাড়িয়ে কথা বলারও চেষ্টা করে সে। মন ভালো থাকলে তার কথা শুনে বোঝার উপায় থাকেনা যে সে মানসিকভাবে গুরুতর অসুস্থ।
এখন যেমন জানালার পাশে দাড়িয়ে বিবিসি প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে একনাগাড়ে অনেক কথা বলতে থাকে আলী।
“আমি অনেকটা বোকার মতোই বাড়ি ছেড়েছিলাম। পরে রাস্তায় একজনকে খুব মেরেছিলাম। পরে সে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলো এবং পুলিশই এরপর আমাকে এখানে নিয়ে আসে। এরপর আসলে কেউ আর জানেইনা যে আমি এখানে। গত রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছ”।
কিন্তু আলীর স্বপ্ন আসলে স্বপ্নই থেকে যায় আর কবে এই স্বপ্ন বাস্তব হবে সেটি নিয়ে আসলে তার কোন ভ্রুক্ষেপও নেই। -বিবিসি থেকে